লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেছে শ্যামলী

মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
একটি পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন একজন নারী। মা, মেয়ে, বোন কিংবা স্ত্রী প্রতিটি রূপেই তিনি নিজেকে ফুটিয়ে তোলেন সমানভাবে। সবসময় নিজের স্বপ্নের কথা না ভেবে পরিবারের কথা চিন্তা করেন। কিংবা লোকে কি বলবে, সে চিন্তা করে নিজেকে চার দেয়ালে বন্দী করে রাখেন। কিন্তু নারীরাও পারে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে। ঘর সামলানো থেকে অফিস, সব জায়গায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন একজন নারী। এমনই এক নারী শ্যামলী রানী দাস (২৬)।


সিংগাইর পৌরসভাধীন বিনোদপুর ঋষিপাড়া গ্রামের মণিঋষি সম্প্রদায়ের মেয়ে শ্যামলী রানী দাস (২৬)। তিনি ঢাকা মডেল ডিগ্রী কলেজে বি.এস.এস বিভাগের ৩য় বর্ষের একজন ছাত্রী। তার পিতার নাম রাধাকান্ত দাস ( মৃত), মাতার নাম আলো রানী দাস (৬০)। তারা দুই ভাই এবং দুই বোন। বড় ভাই বাঁশের কাজ করেন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট ভাই বিদেশ থাকেন। তারা সকলেই আলাদা থাকেন।


শ্যামলীর বয়স যখন ১১ বছর তখন তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। ভাইয়েরা বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর তাদের খরচ চালালেও পরবর্তীতে তারা আর খরচ চালাতে রাজি হন না। তখন তারা মা-মেয়ে দুইজন খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে তার লেখাপড়া। এক পর্যায়ে তার লেখাপড়া বন্ধই হয়ে যায় ।
শ্যামলীর বাবা বাঁশের ঝাঁকা, চালনি, পলো, ঝাড়– প্রভৃতি তৈরির কাজ করতেন। ছোট থেকেই এই কাজগুলো দেখেই তিনি বড় হয়েছেন। দেখতে দেখতে শ্যামলী এই কাজগুলো শিখেও যায়। তখন তার মায়ের সাথে এই কাজগুলো করা শুরু করে। তার মা তাদের কাজের টাকা থেকে কিছু টাকা দিয়ে আবার তাকে স্কুলে ভর্তি করেন দেন।

পড়ালেখার পাশাপাশি যতটুকু সময় থাকে সেই অবসর সময়ে বাঁশের চটা তোলা, জোনা বেতী তোলা, বেতি ফারা, বাঁশের নীল অংশ আলাদা করা জোড়া উঠানো সমস্ত কাজ তিনি একা হাতে করেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি প্রায় ৩০টি ঝাকা তৈরি করতে পারেন। বড় ঝাকার দাম ১৪০ টাকা ও ছোট ঝাকার দাম ১১০ টাকা হারে পাইকারি বিক্রি করেন।
শ্যামলী এখন স্বাবলম্বী। তিনি আর পরিবারে বোঝা নন । তিনি একদিকে যেমন বাঁশের কাজ করেন পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে অসুস্থ মায়ের সেবা করছেন অন্যদিকে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন তার পাশে কেউ ছিল না তখন তার ইচ্ছাশক্তি ও মনের জোরে এই কাজগুলো করে মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘নারীরাও চাইলে সব কাজ করতে পারে।’ তাঁর স্বপ্ন তিনি ভবিষ্যতে তাঁর কাজের সাথে আরও নারীদের যুক্ত করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি নারীকেই আয়মূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা জরুরি।’

happy wheels 2

Comments