আমরা এখন একে অন্যের সহযোগী
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
একজন পুরুষ ও একজন নারী যখন আইনগত স¦ীকৃতি ও সামাজিকভাবে অনুমোদিত বিবাহের মাধ্যমে একসঙ্গে জীবনযাপন করতে শুরু করে তখন একটি পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এখানে পুরুষ হয় স্বামী আর নারী হয় স্ত্রী। এ দুইয়ের সম্মিলিত জীবনের মাধ্যম হলো বিবাহ। স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পরিপূরক। উভয় মিলে পরিপূর্ণ মানব। এ কারনেই স্ত্রী স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী। এমনই একে অন্যের পরিপূরক হয়ে সংসার সামলাচ্ছেন সুনিতা রানী দাস (৩৪) ও নিরদ দাস (৪১)।
সিংগাইর পৌরসভাধীন বকচর ঋষিপাড়া গ্রামে ২ মেয়েকে নিয়ে ছোট একটি সংসার তাদের। নিরদ দাস পেশায় একচন আখের রস বিক্রেতা আর সুনিতা রানী দাস গৃহিনী। বড় মেয়ের নাম চাঁদনী রানী দাস (১২)ভ সে ৫ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে আর ছোট মেয়ের নাম রায় দাস (২)।
২০১০ সালে ধর্মীয়মতে পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। তাদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বিয়ের পর যখন তাদের বড় মেয়ের জন্ম হলো তখন সংসারে আরেকজন সদস্য বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা বিপদে পড়ে যায়। শুধুমাত্র একজনের উপর সংসারের পুরো ভার। অন্যদিকে মেয়ের দেখাশুনার পাশাপাশি একা হাতে পুরো সংসারের কাজ করতে হয় যেমন: গরুর ঘাস আনা, রান্নাবান্না করা, গোয়ালঘর পরিষ্কার করা ও ঘরবাড়ি ঝাড় দেয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা, আখ কাটা, ধোয়া ও ছিলা। তার স্বামী সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে দেয়ে কাজে চলে যান। তখন তার কাজ আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।
এভাবে কিছুদিন যাবার পর সুনিতা আবার ছেলে সন্তানের মা হন। পরিবারে যেন খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার ছেলে জন্ম নিয়েছে পাকস্থলীতে ছিদ্র নিয়ে, বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর যখন আর চিকিৎসা খরচ চালানো তাদের কাছে সম্ভব হয় না এবং ডাক্তারও কোন আশার বাণী দেন না তখন তারা বাড়িতে চলে আসেন। আসার কিছুদিনপরই তাদের সন্তান পৃথিবী ত্যাগ করে। তখন তারা মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। একদিকে ছেলে হারানোর কষ্ট অন্যদিকে সহায়সম¦লহীন। সংসারের খরচ চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। নিরদ দেখেন তার স্ত্রী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করতে শুরু করেন। আশেপাশের মানুষজন এই দেখে নানান কটু কথাবার্তা শুরু করেন। তাঁরা বলেন ‘বেটিরা করবো ঘরের কাম আর বেটারা বাইরের কাম। কিন্তু আশেপাশের এই কটু কথায় নিরদ কিছু মনে না করে তিনি তাঁর কাজ করতে থাকেন। ২০২১ সালে সুনিতা আবার যখন কন্যাশিশুর জন্ম দিলে নিরদ তাকে সবকাজে আরো বেশি সাহায্য করতে শুরু করেন। যাতে তাঁর স্ত্রী যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন।
নিরদ যেমন সুনিতার সাংসারিক কাজে সাহায্য করছে অন্যদিকে সুনিতাও তার স্বামীর ব্যবসার কাজে সাহায্য করছেন। তারা বলেন, ‘‘এই সংসারটা আমাদের। এর ভালো-মন্দ সবকিছু আমাদেরই দেখতে হবে। তাই কিভাবে ভালো থাকা যায় তা নিয়েই আমরা ভাবি। পরিবারের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলে আমরা একসাথে নিই। আমরা চাই প্রতিটি পরিবারেই যেন স্বামী- স্ত্রী একে অপরের সহযোগি হয়ে থাকেন। তাহলে প্রতিটি পরিবারই সুখ আর শান্তিতে ভরে থাকবে।’