সংসারের স্বচ্ছলতায় সুষমা রানীর অবদান
উপকূল থেকে বরষা গাইন
শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রামের সুষমা রানী (৫৫)। প্রতিনিয়ত দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে দিন মজুরি খেটে সংসারের আয়ে ভূমিকা রাখেন। তাঁর স¦ামী অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন কোন কাজকর্ম করতে না পারায় সংসারে দারিদ্রতা চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। তাদের বসতভিটাসহ ১ বিঘা জমি রয়েছে। সুষমা রানীর ২ মেয়ে এবং ১ ছেলেসহ ৫ জনের সংসার। সংসারের অভাবের কারণে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াও পর্যন্ত করাতে পারেননি। দারিদ্রতার জন্য একসময় বড় মেয়েকে কাজের জন্য অন্যের বাড়িতে মাইনে রাখতে বাধ্য হন। প্রায় তিন বছর মেয়ের মাইনে ও মায়ের দিন মজুরির টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। পরবর্তী সময়ে মেয়েকে তারা বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। মা মেয়ে দিন মজুরি খেটে সংসারের খরচ চালাতে থাকেন। একসময় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। তখন বাড়িতে তিনি ছাগল পালন করতেন। মেয়ের বিয়ের জন্য ছাগল তিনটা বিক্রি করতে বাধ্য হন সুষমা রানী।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে যেখানে সংসারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়, সেখানে সংসারের স্বচ্ছলতার দিক বিবেচনা করে সাহসের সাথে নিজের সিদ্ধান্ত ও মতামত জানান গ্রামীণ খুবই সাদামাটা এক নারী সুষমা রানী। প্রাথমিকভাবে স্বামী তপন মন্ডল (৬০) সিদ্ধান্তে সম্মত না হলেও নাছোড়বান্দা সুষমা রানীর সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
সংসারের টালমাটাল অবস্থায় স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় সুষমা রানী সরকারিভাবে রাস্তার কাজ পান। রাস্তার কাজ করে তিনি মজুরি হিসেবে ১২ হাজার টাকা পান। তাঁর স্বামী এই টাকা সংসারে ব্যয় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন এবং খরচ করতে থাকেন। সংসারের অভাব কমানোর জন্য অবশেষে সুষমা রানী গরু পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী প্রথমে রাজি না হলেও স্বামীর অগোচরে সুষমা রানী ১০ হাজার টাকা আলাদা করে রেখে দেন গরু কেনার জন্য। সুষমা রানীর উদ্যোগ ও আগ্রহ দেখে তার স্বামী হাটে একটি গরু পছন্দ করেন এবং বাড়ি এসে সুষমাকে বলেন, “তুমি তো শুনলে না গরু কিনবে, আজ একটা গরু পছন্দ করিছি, তুমি আমাকে ৯ হাজার টাকা দেও।” এভাবে স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে ১০ বছর আগে ৯ হাজার টাকায় স্থানীয় জাতের একটি গরু কেনেন।
বর্তমানে সেই একটা গরু থেকে তার ছয়টা গরু হয়েছে। দুই বছর আগে তিনটি গরু বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করেন এবং গতবছর একটি গরু বিক্রি করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা পান। সেই টাকা দিয়ে বিলেন জমি বিঘা প্রতি ১৬ হাজার করে তিন বিঘা জমি হারীতে নেন। এই জমিতে যে ধান পান তা নিজেদের বছরের খোরাকি রেখে বাকি ধান বিক্রি করে দেন। এছাড়াও গরু বিক্রির টাকা দিয়ে গরু রাখার জন্য পাকা গোয়াল ঘর তৈরির কাজ করছেন। এখন আর তাকে দিন-মজুরি দিতে হয় না। তিনি বাড়িতে গরুগুলো দেখাশোনা করেন পাশাপাশি সবজি চাষাবাদ করেন। গরু পালন ও সবজি চাষ করে বর্তমানে ছোট মেয়েকে লেখাপড়া শিখাচ্ছেন।
কৃষিপ্রতিবেশ চর্চার মাধ্যমে বাড়িতে তিনি সারাবছর বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করেন। সবজি চাষে তিনি গোবর সার এবং জৈব সার ব্যবহার করেন। মাঝে মাঝে তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করেন। তিনি বাড়িতে বীজ রাখার চেষ্টা করেন। অন্যদেরকের বীজ সহযোগিতা করেন।