কৃষিই হলো আমার আয়ের একমাত্র উৎস

সাতক্ষীরার, শ্যামনগর থেকে প্রতিমা রানী
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। যার কারণে প্রতিবছর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনর ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। শত প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে উপকূলীয় অনেক পরিবার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কৃষি তাদের প্রাচীন ঐহিত্য ও সংস্কৃতিকে আকড়ে রেখে। তেমনই একজন কৃষি উদ্যোক্তা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপোট গ্রামের কৃষানী পারুল রানী বৈদ্য (৩৬)। তাঁর বাড়িটি কৃষির একটি মডেলে রূপান্তরিত করছে।

পারুল রানী পরিবারে স্বামী সুজিত বৈদ্য (৪০) দুই ছেলে ও শাশুড়ী সহ ৫ জন সদস্য। তাঁর জমি জমা বলতে ১০ কাঠা বসতভিটা ও এক বিঘা বিলান জমি। আর ১০ কাঠা বসতভিটার উপর বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। তাঁর বাড়িতে আছে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি, ফল ফুল ও ঔষধি গাছ। তিনি সারাবছর বসতভিটায় কুশি, ঝিঙ্গা, তরুল, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ঢেড়ষ, কামরাঙা ঢেড়ষ,বেগুন, ঝাল, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, টমেটো,পালংশাক, লালশাক,ওল,হলুদ, কচুরমূখী, উচ্ছে, লাউ, কলমীশাক, মূলা, ওলকপি, বীটকপি, আলু, পেঁপে চাষ করেন। তিনি প্রতিবছর ১৫০-২০০ পিস ওল লাগান। ওই ওলগুলো তিনি বাড়িতে মাটিতে গর্ত করে তার ভিতর ছাই দিয়ে বীজ রাখেন। পারুল রানীর বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অঢ়াষকৃত শাক হয়, যা চাষ করা লাগে না। গ্রামের লোকেরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এমনকি পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য তাঁর বাড়ি থেকে এসকল শাক সংগ্রহ করেন। এলাকাতে তার বাড়ি শাক বাড়ি হিসাবে পরিচিত হয়েছে।

পারুল রানী বাড়ির সকল ফসল জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার চেষ্টা করেন। যার কারণে বাজারের অন্য সবজির থেকে তার সবজির বাজারে চাহিদা বেশি। এছাড়াও জৈব পদ্ধতি চাষ করায় স্বাদও ভালো। সবজি ক্ষেতের পাশেই মিষ্টি পানির পুকুর আছে। এজন্য সারাবছর ওই পানি দিয়ে সবজি উৎপাদন করতে পারেন। এছাড়াও সবজি চাষের পাশাপশি তাঁর বাড়িতে ১২টি ছাগল, ৮টি হাঁস ১৫টি দেশী মুরগৗ এবং ৫টি কবুতর রয়েছে।

পারুল রানী জানান, ‘আমি আমার ভিটার কোন অংশ ফেলে রাখি না। সব জায়গায় কোন না কোন সবজি চাষ করি। বাড়িতে বছরব্যাপি নিজেদের পছন্দমত সব ধরনের সবজি চাষ করি। এতে করে আমার পারিবারিক খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। কৃষিই হলো আমার আয়ের একমাত্র উৎস। আমরা স্বামী স্ত্রী দু’জনে মিলে এ কাজগুলো করি। তবে আমাদের ফসল উৎপাদনে তেমন কোন খরচ হয় না এবং আমাদের বাজার থেকে কোন সবজি কেনা লাগে না।’

প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ পারুল রানীর কৃষিবাড়ি উপকূলসহ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের কৃষিঐতিহ্য,অস্তিত্ব, সংস্কৃতি এবং স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রার দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল। সরকারি-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগে পারুল রানীর এই জ্ঞান-দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির মাধ্যমে মুল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা জরুরি। তাহলেই উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

happy wheels 2

Comments