কৃষিতে রাসায়নিক দ্রব্য পরিহার করি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করি
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ
‘কৃষিতে রাসায়নিক দ্রব্য পরিহার করি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এক জনসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিশিকুল জনসংগঠন ও বারসিক‘র আয়োজনে উক্ত সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে কৃষকগই কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্য ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব গুলো তুলে ধরেন। একই সাথে তার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে উত্তোরণের সম্ভাব্য দিকগুলো মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
কৃষকরা জানান, চাষক্ষেত্রে কীটনাগক ছাড়া কোন ফসল আমরা উৎপাদন করতে পারিনা। এই এলাকার প্রধান ফসল আলু ও ধান। অন্যান্য ফসল তুলনামূলক কম চাষ হয়। ধানে সাধারণত ৪ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এ বছরে কেউ পাঁচবার পর্যন্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন বলে জানান। আলুতে বিগত দশ বছর আগে চারবার বিষ দিলেই হতো, বর্তমানে আটবার পর্যন্ত প্রয়োগ করতে হয়েছে। দিন দিন কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
তারা আরও জানান, কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন করতে গিয়ে মাছ, পাখি, মৌমাছিসহ কিছু প্রজাতি কমে গেছে। কিছু কিছু বৈচিত্র্য আর আমাদের এলাকায় দেখা যায়না। যেমন-শামুখল, কাদোখোচা, হটটিটি, টিয়া, হুটরা পাখি, বালিহাঁস, রাজহাস। বিলে ও খাড়িতে পাওয়া যাচ্ছেনা কোন ঝিনুক। এছাড়াও জলাশয়ে কমেছে ব্যাঙ, কুইচা, কাঁকড়া, শামুখ ও বিলুপ্ত হয়েছে কচ্ছপ। অপরদিকে কীটনাশক ব্যবহার করা শস্য ফসল, শাকসবজি ও ফলমুল খেয়ে গ্যাসট্রিক, ব্লাডপেশার ও ক্যান্সারসহ মারাক্তক রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সংলাপে কৃষি উপ সহকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘উক্ত সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে জৈব বলাইনাশক ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। জৈববালাই নাশকের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো যেতে পারে। পরীক্ষামুলকভাবে কীটনাশক ছাড়াই অল্প জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করে দেখা উচিত। বাড়িতে কেঁচো সার ও অন্যান্য জৈব সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিতে পারেন, কিন্তু এসব কাজ একা করে ফল পাওয়া কঠিন। তাই সকলে সংগঠিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।’
উক্ত সংলাপে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন দেওয়ান, রিশিকুল আনসার ভিডিপি ক্লাবের সভাপতি আয়নাল হক শান্ত, রিশিকুল স্বপ্নের ভেলা সংগঠনের সহসভাপতি আতিকুর রহমান, প্রবীণ কৃষক মহসীন আলী, স্থানীয় কৃষক ও সংগঠনের সদস্যগণ। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন আলহাজ আব্দুল করিম মিঞা ও সঞ্চালনায় সহায়তা করেন বারসিক প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম শহিদ।