ও পলাশ… ও শিমুল…

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥

আজ পহেলা ফাল্গুন। ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। আর বসন্ত মানেই ফুলের সমারোহ। প্রকৃতির এই বর্ণিল সাজে মানিকগঞ্জের পথে প্রান্তরে পাপড়ি মেলে ধরেছে পলাশ, শিমুল, বেলী, দোলন চাঁপাসহ বাসন্তী ফুলেরা।

‘ও পলাশ .. ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে/জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে . . . লতা মুঙ্গেশকারের কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণ মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এমন অজস্র গানের কথায় কিংবা কবিদের কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। পলাশ-শিমুল আমাদের বাঙালির ফুল। ফাগুনের-বসন্তের-ভালোবাসার ফুল।

1 (12)

বসন্তের মাতাল সমীরণের টকটকে লাল বর্ণচ্ছটায় মন রাঙানো শিমুল-পলাশ প্রকৃতিতে এনে দেয় নতুন মাত্রা। আমাদের সংস্কৃতির আবাহনে হৃদয়কে সাজায় পলাশ-শিমুলের লাল আভা। শিমুল পলাশেরা ছন্দায়িত করে তোলে মন।

পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে শিমুল এসেছে এই বাংলায়। ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সিইবা। মালভেসি গোত্রভূক্ত শিমুল ১৮ রকম হারবাল ওষুধে ব্যবহৃত হয়। পাতাহীন গাছের নগ্ন ডালে প্রকৃতি তার আপন লীলায় মত্ত হয়ে দৃষ্টিকটু গাছে উজ্জ্বল লাল বা গাড় কমলা রঙের পলাশ ফুটিয়ে মানুষের আদর ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে। ফুলে ফলে সমৃদ্ধি বাংলার হাজার হাজার বৃক্ষের মধ্যে পলাশ অন্যতম। রঙেভরা বসন্তে এই ফুলের বিশাল দখলদারিত্ব। যার বৈজ্ঞানিক নাম- Butea monosperma।

দ্বিজেন শর্মা তার বইয়ে লিখেছেন- ‘পলাশ মাঝারি আকারের পত্রমোচী দেশীগাছ। তিনটি পত্র নিয়ে যৌগিকপত্র। ফুল ফোঁটে বসন্তে। ৭.৫ থেকে ১০ সে.মি. আয়তনের শিম ফুলের মতো। বাংলা সাহিত্যে পলাশের প্রভাব অতিশয়।’

2 (7)

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে গাঁয়ের মেঠো পথের ধারে অযত্নে অবহেলায় শিমুল পলাশের কোলজুড়ে হেসে ওঠেছে রক্তিম ফুল। তবে সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি মানিকগঞ্জের দৃশ্যপট আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে এই গাছগুলো। আগে গ্রাম গঞ্জের সবখানে এই ফুলের দেখা মিললেও এখন দেখা পাওয়া খুবই দুস্কর। অনেকের মতে, এটি ফলজ বৃক্ষ নয় শুধু ফুল। ফুল ও জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে আসে না বলে এই গাছ লাগাতে মানুষের অনীহা। আবহমান বাংলার প্রকৃতির রূপ ও দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পলাশ-শিমুল গাছ থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

happy wheels 2

Comments