নারী দিবসের আলোচনা: বস্তিবাসী নারীরা বঞ্চিত, তাদের কথা কেউ বলেনা

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাড়ৈইখালীতে বস্তিবাসী নারীদের নিয়ে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারীনেত্রী ও কবি কাজী সুফিয়া আখতার শেলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্বতারোহী ও সাংবাদিক শায়লা বীথি, মো: জাহাঙ্গীর আলম, ফেরদৌস আহমেদ প্রমূখ।


অনুষ্ঠানের শুরুতে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে নারী দিবস নিয়ে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন পূজা রানী মন্ডল এবং সকল অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটিতে সভাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা এবং সঞ্চালনা করেন হেনা আক্তার রূপা ও রুনা আক্তার।


আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সুফিয়া আক্তার শেলী বলেন, ‘১৮৫৭ সালে নারীরা যে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নারী দিবসের সূচনা ঘটিয়েছিলো তার সুফল আজ সারা বিশ^ ভোগ করছে। কমিউনিস্টরা এই আন্দোলনের সূচনা করলেও পুজিঁবাদী দেশরাও এখন নারীদিবস পালন করে বিশালভাবে। কিন্তু নারীর প্রতি শোষণ বৈষম্য কোনটাই শেষ হয়নি। আমাদের দেশের মূল ব্যক্তিরা নারী হলেও এদেশ থেকে নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি বরং দিনদিন নারীর প্রতি শোষণ বৈষম্য বেড়েই চলছে।’ তিনি বস্তিবাসী প্রান্তিক নারীদের সংগঠিতভাবে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য আহবান জানান।


বস্তিবাসীদের পক্ষ থেকে অপর্ণা গোস্বামী বলেন, ‘আমাদের বস্তিবাসী ও নি¤œ আয়ের মানুষরা বছরের পর বছর নির্যাতিত। আমাদের দিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। আমাদের যেমন ঘর নাই, তেমনি নাই সুন্দর করে বেঁচে থাকার কোন ব্যবস্থা। এই নারী দিবসের আমাদের কথা কেউ বলেনা। আপনারা যেতেহু আমাদের কাছে এসেছেন এজন্য আমরা খুব খুশি।’


পর্বতারোহী শায়লা বীথি বলেন, ‘একটি কাজ পুরুষ করলে যেভাবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তাদেরকে নিয়ে গর্বিত হয়,অন্যদিকে নারী করলে সেভাবে কোন উল্লাস করেনা। নারীরাও অসাধ্য সাধন করছে, এমন কোন কাজ নেই যে নারী আজ পিছিয়ে আছে। পর্বতারোহণের মতন কাজে এখন অনেক নারী দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী দিবসে দাড়িয়ে সকল নারীরই উচিত নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমি পারবোনা এমন যেনো কোন নারী না ভাবে।’


বস্তিবাসীদের আরেকজন প্রতিনিধি বিউটি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাবার পর আমি মারাত্মক সংগ্রাম করে আমার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছি। আমার ছোট্ট ছেলেটি বাধ্য হয়ে কাজ করে আর আমরা মা-ছেলে মিলে আমাদের কষ্টের সংসার। এই নারী দিবসে আমি বলছি, একজন গরীব ও অসহায় নারী হিসেবে আমার জন্য কেউ কিছু করে নাই। তার বাধ্য হয়ে আমি নিজেই নিজের পথ বের করেছি।’


অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান থেকে নারীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য মাটির ব্যাংক তুলে দেয়া হয়।

happy wheels 2

Comments