নগর দরিদ্রের অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলা

রাজশাহী থেকে অমিত সরকার
বারসিক’র উদ্যোগে গতকাল ২৯ মে রাজশাহী সিটির ১৪ টি পাড়া/বস্তির প্রতিনিধিদের নিয়ে বারসিক রাজশাহী রিসোর্স সেন্টারে নগর নি¤œ আয়ের মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ও সবার জন্য বাসযোগ্য নগর তৈরিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বস্তিবাসীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও বারসিক’র কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা সভায় রাজশাহী নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের জামালপুর বস্তির চম্পা বেগম (৪০) বলেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে পরিবার নিয়ে জামালপুর বস্তেিত বসবাস করি। আমরা এখানকার ভোটার। আমাদের জায়গা জমি নেই যাওয়ার কোন জায়গা নেই। রেলের জায়গায় ঘর করে থাকায় সবসময় উচ্ছেদ অভিযানের ভয়ে থাকতে হয়। মাঝে মাঝেই উচ্ছেদের চিঠি দেয় আমাদের। ঘর ভেঙ্গেও দিয়েছে ২ বার।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোট আসলে সবাই আমাদের নানা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ভোট চলে গেলে আর মনে রাখেনা আমাদের কথা। বৃষ্টি হইলে পানি বেঁধে যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে যাই। ঝড় হইলে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায় টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনা।’

পার্শ¦বর্তী রুপালী বস্তির নিলুফার ইয়াসমিন (৩৮) বলেন, ‘আমরা এই নগরীর নাগরিক হলেও সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে সবসময় বঞ্চনার শিকার হই। বিভিন্ন ভাতা কার্ড বা সরকারি সব সেবাগুলো বস্তিতে বসবাসকারীদের নামমাত্র দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ হইলে ওইদিন কাজ বন্ধ থাকে মানে ইনকাম বন্ধ। আবার ঝড় ইইলে বাড়িঘর এর ক্ষতি হয়ে যায়। আমাদের বেশি ক্ষতি হয়। নাগরিক হিসেবে আমাদের ভোটের গুরুত্ব অনেক দেয় কিন্তু সুযোগ সুবিধা বা সেবা দেওয়ার সময় আমরা সব থেকে বেশি অবহেলিত।’


অন্যদিকে একই ওয়ার্ডের ছোট বোনগ্রাম এলাকার মো খোরসেদ আলম (৪৩) বলেন, ‘এই নগরীতে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মত দরিদ্রদের জন্য কোন উন্নয়ন প্রকল্প নেই। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে দামী আলো সেট করা হচ্ছে কিন্তু আমাদের বাসস্থান নিশ্চয়তার জন্য কোন টাকা বরাদ্দ হচ্ছেনা। আমাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা।’


রাজশাহী নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের রেল লাইনের ধার ঘেসে গড়ে উঠা বহরমপুর বস্তি থেকে অংশগ্রহণকারী মো শাহ আলম (৪৩) বলেন, ‘এই শহরে আগে অনেক বড় বড় গাছ ছিলো, পুকুর ছিলো, ফাঁকা মাঠ ছিলো কিন্তু উন্নয়ন ও আধুনিক শহর করতে গিয়ে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে।’


আলোচনা সভার শেষে অংশগ্রহণকারী সকলের মতামতের ভিত্তিতে তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিৎ ও নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য দূর করতে এবং নগর দরিদ্র মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য রাজশাহী মহানগর বাস্তুহারা উন্নয়ন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে মো খোরশেদ আলমকে আহবায়ক এবং নিলুফার ইয়াসমিনকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করেন।

happy wheels 2

Comments