সাম্প্রতিক পোস্ট

প্রসঙ্গে আদি সাংস্কৃতিক সঙ্গীত বিদ্যালয়

নেত্রকোনা থেকে লিপি চৌধুরি

নেত্রকোণা জেলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর। এই জেলাটি বাউল, কবি গান, জারিগানে সমৃদ্ধ। এটি ময়মনসিংহ গীতিকার দেশও। এখানে বিজয় আচার্য, মদন আচার্য, নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রখ্যাত নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদ, উকিল মুন্সি, উস্তাদ গোপাল দত্ত, লোকজ  গবেষক আপেল মাহমুদ, বারি সিদ্দিকী, কুদ্দুস বয়াতি, অন্ধ সিরাজ, বাউল চান মিয়া, বাউল আজাদ মিয়া, বাউল সনতারা, সুনীল শীল অত্রের জন্ম। সংস্কৃতি সমৃদ্ধতায় এইসব মানুষগুলোর অবদান ভোলার নয়। কিন্তু নেত্রকোনার ব্যক্তিত্বদের জন্ম যেখানে সেখানে তো সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতরেই মানুষ আচ্ছন্ন হওয়ার কথা! আর হয়েছেও তাই। এই জেলাধীন সিংহের বাংলা ইউনিয়নে সাংস্কৃতিক দলের অনুপ্রেরণায় গড়ে উঠেছে আদি সাংস্কৃতিক সঙ্গীত বিদ্যালয়। এই সংগীত বিদ্যালয়টি অবশ্য আদি সাংস্কৃতিক নাট্য গোষ্ঠীরই একটি অংশ।
Adi
২০১৫ সালে “আদি সাংস্কৃতিক সঙ্গীত বিদ্যালয়” চালু হয়। এই বিদ্যালয়টি চালু করার উদ্দেশ্য ছিলো বারসিকসহ অন্যান্যদের কাছ থেকে পাওয়া বাদ্যযন্ত্রসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক বাদ্যযন্ত্রগুলোকে চালু রাখা এবং শিক্ষার্থীদের শেখনো। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সবার সম্মতিতে সঙ্গীত শিল্পী মোঃ বজলুর রহমান (আদিনাট্য গোষ্ঠীরই সদস্য ও নিয়মিত বেতার শিল্পী) এবং তবলা বাদক ভক্ত দাসকে উক্ত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে রফিকুল ইসলামকে অভিনয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে দু’একজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই স্কুল শুরু হয়। পরবর্তীতে স্কুলের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম দেখে এলাকার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সঙ্গীত ও অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে জানার জন্য ওই স্কুলে পাঠান। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ২১ জন শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ করছে। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে সাংস্কৃতিক বিষয়ে ক্লাস হয়। এভাবে শিশুর কলকাকলিতে মুখরিত হয় বিদ্যালয়টি। তাদের পদচারণা ও প্রাঞ্জলতায় বিদ্যালয়টি যেন একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই মিলন মেলা প্রত্যেকেই ছুটে আসে কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশায়। এই প্রাপ্তি অভিনয় জানা, সঙ্গীত জানা, বাদ্যযন্ত্র পরিচালনা শেখা কিংবা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। শিক্ষকরাও পরম মমতায় শিশুদের শেখান। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতায়, সক্রিয়তায় একদিন এসব শিশুরা এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চর্চা করার, প্রসার করার এবং বাঁচিয়ে রাখার হাল ধরবে বলে আশা করেন আদিনাট্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। একই সাথে প্রবীণ অধিকারসহ অন্যান্য মানুষের অধিকার সংরক্ষণ ও রক্ষায় সঙ্গীত ও অভিনয়ের মাধ্যমে ভূমিকা রাখবে কোমলমতি এই শিশুরা।
Adi-1
আদি সাংস্কৃতিক সঙ্গীত বিদ্যালয়টি বিসিংহেরবাংলা আদি নাট্য গোষ্ঠীর একটি অংশ। আদি নাট্য গোষ্ঠীর বিভিন্ন নাম রয়েছে যদিও বর্তমানে এই নামেই বেশি পরিচিত। এই প্রসঙ্গে  সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আদি সাংস্কৃতিক সঙ্গীত বিদ্যালয় পুরানো একটি নাম। যার সুচনা ২০০৪ সালে আদিনাট্য গোষ্ঠী নামে। আগে আদিনাট্য গোষ্ঠীকে বিভিন্ন নামে ডাকা হত যেমন- মুক্তা নাট্য গোষ্ঠি, উল্লাস নাট্য গোষ্ঠী বা সৌখিন নাট্য গোষ্ঠী। তিনি বললেন, ‘‘আমি চিন্তা করতে লাগলাম বিভিন্ন নামে ডাকলে স্থায়িত্ব ও প্রশংসিত হবে না। তাই সবাইকে নিয়ে বসলাম। সকলের সামনে একটি নাম প্রস্তাব করলাম। আমার প্রস্তাব সবাই সমর্থন করলেন। এরপর থেকে আদিনাট্য গোষ্ঠী নামেই এটি পরিচিতি লাভ করে।” আদি নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ১৭ জন (নারী-২পুরুষ-১৫)। এই সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ঈদ পূর্নমিলনী অনুষ্ঠান, শারদীয় দুর্গোৎসব, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পৌষ মেলা পালিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় এই আদিনাট্য গোষ্ঠীর মাধ্যমে। এই সামাজিক কর্মসূচি মধ্যে শিক্ষা বৃদ্ধি, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, নেশা, ইভটিজিং, গণসচেতনতা মূলক অনুষ্ঠানসহ ইত্যাদি।

সম্প্রতি বারসিক’র মাধ্যমে এই আদিনাট্য গোষ্ঠী সংগঠনটি প্রবীণ অধিকার সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রচারাভিযান অংশ নেয়। সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন, বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে প্রবীণদের বিষয়গুলো নিয়ে জানতে পারেন। বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করার পর তারা এ নিয়ে নিজেরাই স্ক্রীপ্ট লিখে নাটক/যাত্রা মঞ্চস্থ করেন (শ্রদ্ধা, মায়ের ভালোবাসা, জীবন নদীর তীরে)। এভাবেই সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে চলে আসেন, ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদের সংগঠন সম্পর্কে মানুষকে জানান। সংগঠনের সদস্যরা উপলদ্ধি করেন যে, তাদের বর্তমান কাজকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য নতুনদের মধ্যে এটি সঞ্চার করা প্রয়োজন। এই চিন্তা থেকেই আদি সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন বলে তারা জানান।

happy wheels 2