ফকির-সাগরের সন্দেশের সুখ্যাতি দেশজুড়ে
সাতক্ষীরা থেকে শেখ তানজির আহমেদ
ফকিরের সন্দেশ। যার সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তাই বলে কি সাগরের সন্দেশ পিছিয়ে আছে। না, স্বাদ, মান ও গুণে সাগরের সন্দেশও পরিচিত সবখানে। আর ভাগ্যকুলের দই তো সারাদেশে যাচ্ছে প্রতিদিন।
১৯৬০ সালে গোলাম মোহাম্মদ ফকির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা শহরের শহীদ কাজল সরণিতে নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফকির মিষ্টান্ন ভা-ার। সেই থেকে আজ অবধি সুনামের সাথে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সারাদেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও পরিচিতি রয়েছে ফকির মিষ্টান্ন ভা-ারের। সাতক্ষীরার মানুষের দেখা পেলে ফকিরের সন্দেশের কথা শোনেন না, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আবার সাতক্ষীরা থেকে কেউ আসবে, এমন কথা শুনলে ফকিরের সন্দেশ আনতে বলতেও ভোলেন না কেউ।
প্রায় সমসাময়িক সময়েই শেখ আব্দুর রশিদ নামে আরো একজন ব্যবসায়ী শহীদ কাজল সরণিতে প্রতিষ্ঠা করেন হোটেল সাগর। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে সাগরেরও। সাগরের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রতিধানযোগ্য। সাগরের সন্দেশের কথা যেন ভুলতে পারেন না কেউ। রেস্তোঁরা ধাচ পাল্টে প্রায় ১৫ বছর যাবত শুধু মিষ্টান্ন উৎপাদন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সেই সাথে নামও পাল্টে হয়েছে সাগর সুইটস।
তবে, মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে দইসহ অন্যান্য মিষ্টি পাঠাচ্ছে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভা-ার।
শুধু ফকির মিষ্টান্ন ভা-ার, সাগর সুইটস কিংবা ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভা-ার নয়, সাতক্ষীরার শহীদ কাজল সরণির মাতৃভা-ার, পোস্ট অফিস মোড়ের হালিমা হোটেল, বড় বাজারের সুশীল, সাহা ও নুর সুইটসে উৎপাদিত মিষ্টি স্বাদ, গুণ ও মানে অন্যান্য। আর সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারীর শাখা রয়েছে সারাদেশে।
এসব মিষ্টান্ন ভা-ারে নলেন গুড়ের সরপুরি ও প্যাড়া (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), সাদা সন্দেশ, রসমালাই, সানার জিলাপি, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক, বালিশ চমচম, দানাদার, দুধ মালাই (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), ক্ষীর সন্দেশ, রসগোল্লা, দইসহ নানা প্রকারের মিষ্টান্ন তৈরি হয়।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৩য় সর্বোচ্চ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা সাতক্ষীরা। দুধের সহজলভ্যতা এ জেলার মিষ্টান্ন উৎপাদন ও বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। সঙ্গত কারণেই উৎপাদিত মিষ্টান্নের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
প্রতিদিনকার উৎপাদন সম্পর্কে ফকির মিষ্টান্ন ভা-ারের ম্যানেজার মুজিবর রহমান জানান, তাদের কারখানায় প্রতিদিন রাতে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কেজি দুধের মিষ্টি তৈরি হয়। শো’কেসে সাজানোর আগেই বিক্রি হয়ে যায় সব। ক্রেতাদের মধ্যে বড় অংশই জেলার বাইরের। তবে, পাইকারী ক্রেতা নয় তারা। সাতক্ষীরায় বেড়াতে এসে ফকিরের সন্দেশ নিয়ে যাবে না, তা কি হয়! প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সাথে বর্তমানে উৎপাদিত মিষ্টির স্বাদ, গুণ ও মানে কোন পার্থক্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেশি গরুর দুধের মিষ্টি ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশি গরুর দুধ পাওয়া দুষ্কর। সবাই বাণিজ্যিক, তাই জার্সি গুরুর দুধ সরবরাহ বেড়েছে। এই আর কি।”
ফকির মিষ্টান্ন ভা-ারে ১৮ বছর যাবত কাজ করছেন রবিউল ইসলাম বাবু। তিনি জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, “ভাই, ১৮ বছর ধরে এখানে কাজ করি। কোন দিন আমাদের মিষ্টি সম্পর্কে কোন অভিযোগ শুনিনি। মিষ্টি তৈরির পরপরই সব বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে খেয়ে স্বাদ ও মান পরীক্ষা করে তারপর কেনেন। তাতে আমরাও খুশি হই। আবার অনেকে বিক্যাশে টাকা পাঠালে আমরা গাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়ে দেই।”
রাজধানী ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় এসেছিলেন এনজিও কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। ফেরার পথে ফকিরের সন্দেশ ও সাগরের দুধ মালাই নিতে ভুল করেননি তিনি। বললেন, “এর আগেও সাতক্ষীরায় এসেছি। তখন সহকর্মীর পরামর্শে মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। আর এবার আসার সময় আপনার ভাবী বলেছিলেন, সাতক্ষীরা থেকে মিষ্টি নিয়ে যেতে।”
সাগর সুইটসের ব্যবস্থাপক সৈয়দ সারফিরাজ উদ্দিন বলেন, “ভাই পাকিস্তান আমলে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা করে। এখনও সুনামের সাথে ব্যবসা করছি। কেউ কোন দিন অভিযোগ দিতে পারেনি। কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ী, যারা সাতক্ষীরায় আসেন তারা সাগর বললে এক নামে চেনে। এমনিতেই সাতক্ষীরার মিষ্টির আলাদা সুনাম রয়েছে সারাদেশে। আমরা মিষ্টিতে ভেজাল দেই না।”