স্বরূপকাঠিতে তরমুজের ভালো ফলন; জমজমাট ভাসমান হাট
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল
আবহাওয়া অনুকূলে থাকা আর ফসলে পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম ছিল বলেই উপকূলীয় চরাঞ্চলে এবার তরমুজের ফলন ভালো। উপকূলের তরমুজ চাষীরা মাঠ থেকে ফলন তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন রসালো তরমুজের ভরা মৌসুম। এবার ফলন ভালো বলে হাট বাজারে খুব সহজেই মিলছে তরমুজ। উপকূলীয় পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে কয়েকযুগ ধরে চলছে তরমুজের ভাসমান হাট। নৌপথে যান্ত্রিক ট্রলার বোঝাই করে এখানে মৌসুমের এ সময়টাতে স্বরূপকাঠিতে বসে বাণিজ্যিক বাজার। এবার ফলন ভালো তাই স্বরূপকাঠির ভাসমান তরমুজের হাট এখন জমজমাট। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চলতি বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষী ও ব্যবসায়িরা অত্র অঞ্চলের বৃহৎ মোকাম স্বরূপকাঠি উপজেলার উপজেলার মিয়ারহাট বন্দর সংলগ্ন খালের পাড়জুড়ে তরমুজের ভাসমান হাটে তরমুজের পসরা নিয়ে আসেন ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষীরা তরমুজ এনে এ হাটে খুব সহজেই বাজারজাত করতে পারেন। স্বরূপকাঠির স্থানীয় বেপারী ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, সিলেট, কুমিল¬াসহ বিভিন্ন এলাকার বেপারীরা এখান থেকে তরমুজ কিনে ট্রাকে ও লঞ্চে করে নিয়ে যায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠির বিলাঞ্চল খ্যাত বলদিয়া, মুননাগ, ডুবি, লরা গ্রাম, নাজিরপুরের বৈঠাকাটা, বিল ডুমুরিয়া, চিতলমারীসহ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার কলাপাড়া, মহিপুর, মুন্সিরহাট, কুয়াকাটা, রাংগাবালি, গোলখালী, চেংরাতলা, তালতলী, গলাচিপা, গাজীপুর, সোনাখালী, ধানখালী, বাদুরা, বাংলাবাজার, নলুয়াবাগি, কালাইয়া প্রভৃতি উপকূলীয় অঞ্চল থেকে চাষী ও বেপারীরা তরমুজ নিয়ে স্বরূপকাঠির মিয়ারহাট বন্দরে পাইকারী বিক্রি করেন। চাষী পাইকার ছাড়াও স্বরূপকাঠিসহ পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলার শত শত ব্যবসায়ীরা এ মৌসুমের শুরুতে (ক্ষেতে তরমুজের ফুল ও গুটি হওয়া থেকে) ওই সমস্ত অঞ্চল থেকে ক্ষেতমুলে তরমুজ ক্রয় করে স্বরূপকাঠির ওই মোকামে নিয়ে বিক্রি করেন। মিয়ারহাটের ভাসমান হাটে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।
মিয়ারহাট বন্দরের ফলের আড়তদার মো. সেলিম মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর তরমুজের আমদানী কিছুটা কম। এ বছর দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বেশির ভাগ এলাকায় ফলন হয়েছে খুবই কম। ফলে অনেক চাষীরা খরচের টাকা ঘরে তুলতে কষ্ট হবে। পটুয়াখালির গলাচিপা উপজেলার নতুন চরবাদুরা গ্রামের চাষী মো. মঞ্জু মিয়া, মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, দক্ষিণাঞ্চলে এবার তরমুজের ফলন একটা ভালো হয়নি তবে চাহিদা পূরণ হবে। গত বছরের অবরোধ হরতালে ক্ষতি চাষী, বেপারীরা কিছুটা পুষিয়ে ওঠতে পারবেন। স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী অনিসুর রহমান বাদল জানান, মিয়ারহাট থেকে তরমুজ কিনে স্বরূপকাঠি বন্দর থেকে ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চালান দেয়া হয়। ঢাকা, চট্গ্রাম ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালি, সিলেট, কুমিল¬¬াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজ চালান দেয় বেপারীরা। মৌসুমী ফল তরমুজের অন্যতম মোকাম মিয়ারহাট বন্দরে সোম ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও প্রতিদিনই তরমুজের হাট বসে। হাটের দু’দিন আমদানী বেশি থাকে। ভাসমান তরমুজ হাট ঘুরে দেখা গেছে, বড় সাইজের একশ’ তরমুজ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, মাঝারী সাইজের তরমুজ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা এব ং ছোট সাইজের তরমুজ ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তরমুজের হাটে চাষী বেপারী ও ক্রেতারা যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী মাল কিনতে পারে। বন্দর কমিটি তাদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা বিধান করেন। এখানে কোন সিন্ডিকেট বা কোন চাঁদাবাজী নেই। ফলে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বিঘœ জমে তরমুজের হাট।