উপকূল-বৈচিত্র্য সুরক্ষায় নবীন ও প্রবীণ সংহতি
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
সুন্দরবন উপকূল-বৈচিত্র্য সুরক্ষায় নবীন ও প্রবীণ সংহতি নামে সুন্দরবন সুরক্ষার এক ভিন্ন ধরনের প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয়। বঙ্গোপসাগরেরর মোহনায় সুন্দরবনের শেষ সীমানায় দুবলার চরের ‘আলোর কোল’ নামক স্থানে রাস উৎসবে এই প্রচারাভিযান চালানো হয়। দুবলার চরের এই রাস উৎসব প্রায় ২০০ বছরের পুরানো একটি ঐতিহ্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।
রাস উৎসবকে ঘিরে বারসিক’র আয়োজনে সুন্দরবন ও উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং দর্শনার্থীদের সচেতন করতে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম, শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্র, হায়বাতপুর সেবা কৃষক সংগঠন, চন্ডিপুর কৃষক সংগঠন, চন্ডিপুর আইপি এম কৃষক সংগঠন, বাদঘাটা পরিবেশবান্ধব কৃষি ক্লাব, ইসমাইলপুর পরিবেশবান্ধব কৃষি ক্লাব, দাদপুর আইসিএম কৃষি ক্লাব, দাঁতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন, বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ন প্রকল্প, সোনামুগারী জেলে কল্যাণ সমবায় সমিতি, কালমেঘা মানব কল্যাণ কৃষক সংগঠন, কল্যাণপুর জেলে সংগঠন, বাদঘাটা বহুমুখী সমবায় সমিতি, বনবিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, কৃষি অফিস, বনজীবীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। মূলত যাত্রাপথে কেউ যেন সুন্দরবনে লাউডস্পিকার না বাজায়, নদীতে পলিথিন বা অন্যান্য বর্জ্য ও তেল জাতীয় দ্রব্যাদি না ফেলে সেজন্য দর্শার্থীদের সচেতন করার জন্য এই ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়।
সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে গত ২ থেকে ৪ নভেম্বর তিনদিনব্যাপী শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ২০১৭। এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে বারসিক থেকে তিনদিনব্যাপী উক্ত প্রচারমূলক অনুঠানের আয়োজন করা হয়। ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ অফিস থেকে পাশ পারমিট সংগ্রহ করে একটি বড় ট্রলার যোগে যাত্রা শুরু করা হয়। ১ম দিন সকালে ট্রলারের অভ্যন্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, মানবাধিকার ও সামাজিক উন্নয়নে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী তরুণ ও যুব সংগঠকদের নিয়ে ‘তরুণ প্রজন্মের উন্নয়ন ভাবনা’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনা আয়োজন করা হয়। বিকালে ‘আমাদের কথা, আমাদের কৌশল’ শিরোনামে উপকূল অঞ্চলের কৃষক, জেলে, বনজীবীসহ নানা পেশাজীবী জনসংগঠন প্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
৩ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার সকালে আলোকোলের সমুদ্র সৈকতে ‘সুন্দরবনের নদীতে বর্জ্য না ফেলি’ শিরোনামে সুন্দরবনের নদীকে পলিথিনসহ নানা ক্ষতিকর বর্জ্য না ফেলার আহবান জানিয়ে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পালন করা হয়। একইদিন বিকালে ‘সুন্দরবনের উপকূল সুরক্ষায় প্রজন্মের শপথ’ শিরোনামে সুন্দরবনের উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি ও জনজীবনের বৈচিত্র্য সুরক্ষায় শপথনামা গ্রহণ করা হয়।
শেষ দিন ৪ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার ‘সুন্দরবন উপকূল সুরক্ষা ও আমাদের দায়িত্ব’ শিরোনামে সুন্দরবন উপকূল সুরক্ষায় প্রবীণ ও তরুণ প্রজন্মের অধিকার ও দায়িত্ব বিষয়ক জনসংলাপ এর আয়োজন করা হয়। গবেষক পাভেল পার্থ এর দিক নির্দ্দেশনায় বারসিক কর্মকর্তা মননজয় মন্ডলের সঞ্চালনায় উক্ত প্রোগ্রামসমূহে বক্তব্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ গাজী, কৃষি উপসহকারী, নূর আলী বিশ্বাস, নূর আলী, উপজেলা জনসংগঠন সম্বয় কেন্দ্রের সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সভাপতি মারুফ হোসেন মিলন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য সুরক্ষা টিমের সভাপতি ও সাংবাদিক শেখ তানজির আহমেদ, বারসিক’র এলাকা সমন্বয়কারী পার্থ সারথী পাল।
পূণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব। শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের আগে হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী সাগরের প্রথম জোয়ারের পানিতে পূণ্য স্নান করে নিজ মনোবাসনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন।
আলোর কোল দ্বীপেই বসে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় উৎসব রাসমেলা। প্রতি বছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত এ মেলায় দেশি-বিদেশি পূর্নার্থী ও পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয়। সুন্দরবনের দুরবলারচরে রাসমেলায় আগত পূণ্যার্থী, দর্শনার্থী, পর্যটক, বনবিভাগ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, স্থানীয় সরকারও অন্যান্য পেশাজীবী জনগণের কাছে ও কর্মসূচির মূল সুর পৌঁছে দেয়ার তিনদিনের এই বিশেষ সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।