মানিকগঞ্জে কৃষি জমিতে ইটভাটার মহোৎসব
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
মানিকগঞ্জে মাত্র ৯৯ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টর কৃষি জমি। নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। তার উপর নিয়ম না মেনেই তৃফসলী ফসলী জমিতে যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। এর ফলে কৃষক হারাচ্ছে তার ফসলী জমি; বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ; খাদ্য ঘাটতির আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রে জানা যায়, জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে যার মধ্যে বেশির ভাগ ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করা নেই। অনুমোদন ছাড়াও ইটভাটা চলছে। এছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে ইটভাটা নির্মাণ করে যাচ্ছে। অনেক ইটভাটার পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। অদৃশ্য কারণে একের পর এক ইটভাটা স্থাপন হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
মানিকগঞ্জ সদরে চলতি বছরেও একাধিক ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে। যেসব কারণে দ্রুত কৃষিজমি কমে যাচ্ছে তার অন্যতম কারণ ইটভাটা। মানিকগঞ্জের দিঘী ইউনিয়নের ভাটবাউর মৌজায় নতুন ইট ভাটা নির্মাণকে কেন্দ্র করে কৃষক ও ভাটার মালিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা ফসলী জমিতে ইটভাটা না করার জন্য ২শত ৪৭ জন স্বাক্ষরিত কৃষক জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপেক্ষিতে সদর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা একাধিকবার ইটভাটা এলাকা তদন্তও করেন। সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর রবিবার দু’পক্ষের উপস্থিতিতে সরেজমিনে তদন্ত করেন সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর-রউফ খান।
কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, “বিভিন্ন কারণে কৃষিজমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। আমরা খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছি। তার উপর তিন ফসলী জমিতে নতুন করে ইটভাটা করলে আমরা একেবার নিঃশেষ হয়ে যাব। কিছু জমির মালিককে টাকার লোভ দেখিয়ে কৌশলে জমি ইজারা নিয়েছে। তিন ফসলী জমিতে ইটভাটা না করার জন্য এলাকার সকলেই সোচ্চার। ইটভাটাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় অনাক্সক্ষাখিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” তিনি আরো বলেন, “মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সহকারী পরিচালক মো. সাইদ আনোয়ার চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত স্থানে ইটভাটা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও কিভাবে এখানে ইট ভাটা হতে যাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
ইট ভাটার মালিক ফজলুল হক বলেন, “সরকারের নিয়ম মেনেই আমি ইটভাটা করবো। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে একই মৌজায় ইরি জমিতে নতুন নতুন ইটভাটা হচ্ছে সেগুলো বন্ধ না করে আমারটি বন্ধ করার পায়তারা চলছে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিৎ। যে ভাটা নিয়ে কৃষকরা আপত্তি তুলছে সেখানে ইরি ধান হয় না।”
সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর-রউফ খান বলেন, “একাধিক ফসলী জমিতে উটভাটা করার বিধান নেই। কৃষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সরেজমিনে তদন্ত করেছি। খুব দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করা হবে।”
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, “জেলায় মোট ৯৯ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর, ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত কৃষি জমি কমে যাবে। এর ফলে জেলাবাসী তীব্র খাদ্য ঘাটতির আশংকা রয়েছে।”