কৃষকই হচ্ছেন দেশের মেরুদন্ড
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
কৃষকের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা, নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা, কৃষক পেনশন স্কিম চালুকরণ, পরিকল্পিত উন্নয়ন-জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, জৈবকৃষি চর্চা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি দাবিকে সামনে রেখে গত ১২ নভেম্বর মানিকগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো প্রথম কৃষক সম্মেলন ২০১৭। মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন কৃষক-কৃষাণি সংগঠন ও বারসিক এর যৌথ উদ্যোগে বেঊথা বাগান বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে দিনব্যাপি কর্মসূচিতে মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর, হরিরামপুর ও ঘিওর মোট ৪টি উপজেলার ৪১টি কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধি, সমমনা, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, সমাজকর্মীসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে।
বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন বায়রা গ্রামের প্রবীণ কৃষক ইব্রাহিম মিয়া। কৃষক সম্মেমলন প্রস্তুতি কমিিটর আহবায়ক করম আলী মাস্টারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বক্তারা। আলোচনা সভায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি অ্যডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, “আমদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ, কৃষকই হচ্ছে এদেশের প্রাণ। আমাদের কৃষি এবং কৃষককে বাঁচাতে হবে। আমরা নদী দখল, কৃষি জমিতে ইটভাটা র্নিমাণসহ নানা কারণে আমাদের কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ, কৃষক, কৃষি বাঁচাতে আজকের কমিটির মাধ্যমে আমরা এক সাথে কাজ করবো।”
করম আলী মাষ্টার তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমাদের দেশের মেরুদন্ড হচ্ছে কৃষক আর এই কৃষকদের অধিকার অর্জন করতে হলে আমাদের সকলেই এক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে কাজ করতে হবে।”
কৃষাণী কমলা বেগম বলেন, “আমি একজন কৃষাণী। আমার ৫ শতক বাড়ি ছাড়া আর কোন জমি নাই। আমি জমি কটে রেখে চাষ করি। ২০-২৫ ধরণের বিভিন্ন রকম সবজি ও মসলা চাষ করি। জৈব উপায়ে চাষ করি। ঢাকা থেকে গাড়ি এসে আমার সবজিসহ অনেকের জৈব সবজি নিয়ে যায়। গত বন্যায় আমার জমির সব শাক-সবজি, মসলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমার জমিতে পানি আছে। ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় আমার জমিতে অন্য সবার জমি থেকে পানি চলে আসে। আমি এই অনুষ্ঠঅনের মাধ্যমে সরকারের কাছে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য যাতে ড্রেনের ব্যবস্থা করে তার দাবি জানাচ্ছি।”
বরুন্ডি কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস সরকার বলেন, “হাটিপাড়া ইউনিয়নে বেড়িবাধের কারণে আমদের কৃষি জমিতে পানি প্রবেশ না করতে পারায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সুইচ গেট নির্মাণের মাধ্যমে জমিতে পানি প্রবশের ব্যবস্থা করতে হবে।”
হরিরামপুরের কৃষক ্আব্দুস শহীদ বলেন, “কৃষক সারাদিন জমিতে কাজ কাজের সঠিক মুল্যায়ন পায়না তাদের জন্য কৃষি পেনশন চালু করাসহ কৃষি পুর্নবাসন সহায়তা চালু কারতে হবে।” জেলা ক্ষেত মুজুর সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, “কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে কৃষকদেরকে এক ছাতার নিচে অবস্থান করতে হবে। একমাত্র কৃষকই আজ অবহেলিত। আমরা এই অবহেলিত কৃষকের অধিকার অর্জনে একসাথে কাজ করতে চাই যেন কৃষকগণ তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পায়।”
তাছাড়া আলোচনায় বক্তারা কৃষকের পেনশন ও নারী কৃষকের স্বীকৃতি, খাদ্যযোদ্ধা হিসেবে কৃষেকের প্রাপ্ত সম্মান করা, কৃষিতে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, কৃষি জমিতে পানি প্রবেশের জন্য স্লুুইচগেট নির্মাণ, ধলেশ^রী নদী নালা খাল বিল খনন, কৃষি জমি থেকে ইটভাটা অপসাসারণসহ বহুবিধ দাবি উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নবগ্রাম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মী চ্যাটার্জী, সুজন এর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন কচি, জেলা ক্ষেত মুজুর সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, সিংগাইর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমান আলী, বায়রা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি ফরহাদ হোসেন, বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন, হরিমাপুর এর কৃষক আব্দুস শহীদ, ঘিওর এর কৃষক মো. বারব আলী, বরুন্ডি কৃষক-কৃষানি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস সরকার, কৃষাণী কমলা বেগম, রোকেয়া বেগম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বিশ^াস মিলনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ।
আলোচনা সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়। এরপর বারসিক কর্তৃক কৃষকদের সাথে পরিচালিত বিগত ২ বছরের কার্যক্রমসমুহ তুলে বক্তব্য রাখেন বারসিক এর প্রোগ্রাম অফিসার শিমুল কুমার বিশ্বাস।
আলোচনা সভার শেষে ৪টি উপজেলা থেকে আগত কৃষক-কৃষাণীর সমন্বয়ে করম আলী মাস্টারকে সভাপতি ও মো. ইউসুফ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটির নামকরণ করা হয় মানিকগঞ্জ জেলা কৃষক উন্নয়ন সংগঠন।
আলোচনা শেষে বারসিক এর সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে কৃষি সংক্রান্ত গান ও উপস্থিত কৃষাণীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।