তানোরে কালিজিরা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে
রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
রাজশাহী জেলার তানোরে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে দামী মসলা জাতীয় ফসল কালিজিরার চাষ। ব্যয়বহুল এই মসলা জাতীয় সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে উপজেলার কৃষকদের। কালিজিরা শুধু মসলা জাতীয় ফসল নয়, সব রোগের ঔষধ হিসেবে খ্যাত এই কালিজিরা। চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার বহড়া গ্রামে পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন সফল সবজি চাষি কৃষক মো. আব্দুল হামিদ।
উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহড়া গ্রামের মৃত জমির উদ্দীন ছেলে সবজি চাষি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, “আমি এর আগে ১৬ শতাংশ জমিতে মসলা জাতীয় ফসল জিরা চাষ করেছি। জিরার বীজ এনেছিলাম ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য ফলন আশানুরূপ হয়নি। তাছাড়া জিরা চাষে নিবিড় পরিচর্চার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে কালিজিরা চাষে একটু যত্ন নিয়েই ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।”
তিনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ শতাংশ জমিতে এই কালিজিরার চাষ করেছেন। কম খরচে বেশি লাভের আশায় উপজেলায় তিনিই প্রথম এই ফসলের চাষ শুরু করেন। তিনি আশা করেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাটা-মাড়াই শেষ করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন দামী এই ফসল। তিনি কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এই কালিজিরা চাষে সফল হয়েছেন বলে জানান। নিয়মিত ফসল চাষের একঘেয়েমি থেকে পরিবর্তন আনার জন্যই মূলত তিনি এই ঔষধি মসলা জাতীয় ফসল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আয়ুর্বেদী, ইউনানি ও কবিরাজি চিকিৎসায় কালিজিরা ও কালিজিরার তেল ব্যাপক ব্যবহারের প্রচলন আছে। আদিকাল থেকে লৌহ, ফসফরাস ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ কালিজিরা বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে কালিজিরা বীজ বপন করতে হয় এবং তিন মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। সমতল, বেলে, দোঁআশ মাটিতে কালিজিরা ভালো হয়। চাষ, বীজ, সার ও পানি বাবদ বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়, ফলন হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ। বর্তমানে ১ মণ কালিজিরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার টাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে এই দামী মসলা কালিজিরা চাষ সম্ভব। বিশেষ করে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে এই কালিজিরা ফসল চাষ করে যেমন পানি সাশ্রয় হবে অপরদিকে কৃষক কম খরচে বেশি লাভবান হবেন। তাছাড়া কালিজিরা ঔষধিগুণ সম্পন্ন মসলা। তিনি বলেন, “কালিজিরার তেল যেমন দামি তেমনি এর ফুলের মধুও খুব সুস্বাদু। কালিজিরা বাণিজ্যিভাবে চাষে আমরা কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছি। আগামী জুলাই থেকে কালিজিরার ওপর একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।”