বাড়ির ছাদে সবুজের সমারোহ
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম
“গাছ প্রকৃতির বন্ধু। আবার মানুষেরও বন্ধু। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আর এই ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে মানুষ। গাছ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তেমনি মানুষ ছাড়া গাছও বাঁচতে পারে না। পরিবেশে ক্রমান্বয়ে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তাই তো শুরু করেছি ছাদ বাগানের কাজ।” এমনটাই বললেন গাছ ও পরিবেশের বন্ধু এম.এ. জলিল। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেতে এই বাাগান করেছি।
পৈত্রিকসূত্রে সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা তিনি। সদর উপজেলার দক্ষিণ পলাশপোলে বাড়ি তাঁর। চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ৪০ বছরের মতো। ঈষিকা নামের একটি আর্টের দোকানও আছে তাঁর। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তীব্র নেশা। কয়েক হাজারেও বেশি ছবি এঁকেছেন।
হঠাৎ করেই চিন্তা করলেন বাড়ির ছাদে টবে কিছু গাছ লাগাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ৫টি গাছের চারা নিয়েই শুরু করলেন ছাদ বাগানের কাজ। বাড়ির ছাদের আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গফুট। প্রায়ই ২-৫টি গাছ রোপণ করতেন বাগানে।
বর্তমানে এখন বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ, ঔষধি, মসল্লাসহ ১৩০-১৩৫টি গাছ আছে। তিনি এসব গাছ সদর উপজেলার নার্সারি ও যশোর থেকে সংগ্রহ করেছেন। বাইরে কোথাও বেড়াতে গিয়ে নতুন প্রজাতির গাছ পেলে তা সংগ্রহ করে আনেন। ছাদ তো নয় যেন সবুজের সমারোহ।
সকালে ও বিকালে গাছের পরিচর্যা করেন নিবিড় হাতে। প্রতিদিন গাছগুলোতে পানি দেন। দিনে ২-৩ ঘণ্টা সহধর্মিনীর সাথে সময় কাটান এখানে। বাগানে আসলে আর নিচে নামতে ইচ্ছা হয় না তাঁর। বাগানে আছে দুইটি বনসাইকৃত বনজ গাছ। একটি ২০ বছরেরও অধিক বয়সী বটবৃক্ষ। অপরটি তিন বছরেরও অধিক বয়সী চীনা বাঁশের ঝাড়।
ফলজ গাছের মধ্যে রয়েছে ছয় জাতের আম, দুই জাতের লিচু, কাগুচি লেবু, দুই জাতের কমলালেবু, আপেল, জামরুল, ডালিম, বেদানা, চার জাতের পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আঙুর, চেরিফল, করমচা, ট্যাংক ফল, কালো জাম, কুল, আঁতা, কাঁঠাল, দুই জাতের কদবেল, দুই জাতের ছফেদা, আশফল, দুই জাতের মাল্টা।
ঔষধির মধ্যে আছে আমলকি, তেতুল, নিম, ডায়াবেটিকস গাছ। মসল্লা জাতীয় গাছের মধ্যে রয়েছে এলাচ ও দারুচিনি। ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, পাতাবাহার, মল্লিকা, দুই জাতের জবা, স্থল পদ্ম। শাকসবজির মধ্যে রয়েছে পেঁপে, আমড়া, লাউ, কুমড়া, সিম, পেয়াজের কালি, পুঁইশাক, কাঁচা ঝাল, ক্যাপসিকাম, কচু ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে শোভা বর্ধনকারী বিভিন্ন ধরণের গাছ।
জামরুল, পেয়ারা, কাগুচি লেবু হয় প্রচুর পরিমাণে। এছাড়া আম, ছফেদা, কামরাঙ্গা, কাঁচা ঝাল পেয়েছেন দুই বারের মতো। নিজে খান ও প্রতিবেশীদের মাঝেও বণ্টন করেন। গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হবে।
বাগান দেখার জন্য অনেক মানুষ আসে এলাকা থেকে। মাঝে মাঝে বাইরে থেকেও মানুষ আসে বাগান দেখার জন্য। বাগান দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। এতটুকু জায়গায় এতো জাতের গাছ লাগানো দেখে বোঝাই যায় না।
ছোট ছাদে কম জায়গায় অনেক গাছ লাগিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরও অনেক গাছ লাগানোর ইচ্ছা আছে তাঁর। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে কলম তৈরি করার চিন্তা করছেন। ভালো জাতের গাছের কলম করে সেগুলো বিক্রি করবেন এটাই তার প্রত্যাশা।
একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, “বেশি বেশি গাছ রোপণের মাধ্যমে পরিবশেকে গ্রীন হাউজের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করা সম্ভব। গাছ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। মানুষ বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে। আরও বাঁচবে পৃথিবী। গাছ লাগিয়ে চারিদিকে গড়ে তুলি সবুজের সমারোহ।”