পুকুর পুনঃখননের ফলে সুপেয় পানি সংরক্ষিত হবে
বারসিকনিউজ ডেক্স
জলের দেশেই জলের আকাল। জল ছাড়া জীবন চলেই না। প্রতিটি প্রাণ এবং ফসল চাষের জন্য সুপেয় পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এর মাধ্যমে প্রাণ ও ফসলের অস্তিত্ব রক্ষা পায়। তবে দিন দিন সেই জলের আধার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বৈরী জলবায়ু ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে। যার প্রভাবে পরিবর্তন এসেছে মানুষসহ সব জীবনসত্তার জীবনে। সুপেয় জলের আরেকটা উৎস হচ্ছে আমাদের ভূগর্ভস্থ। উৎস যাই থাকুক না কেন, এ জলের কারণে আমাদের জমির ফসল উৎপাদন হয়। সুপেয় পানিকে কেন্দ্র করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের যাবতীয় উৎস সরবরাহ হয়।
লবণাক্ত পরিবেশে কৃষিকাজ করে টিকে থাকার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকেরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। মিষ্টি পানির অভাবে কৃষি জমির মাটিও হয়ে পড়েছে লবণাক্ত। চাষের জন্য মিষ্টি পানির অভাবে কৃষকেরা দিন দিন কৃষি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। চারিদিকে লবণ পানির ঘের হওয়ায় গবাদিপশু-পাখির খাদ্য, অ-চাষকৃত উদ্ভিদ, চারণভূমি ও সুপেয় পানির উৎস বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিলুপ্তির পথে প্রাণবৈচিত্র্য। বিপন্ন হচ্ছে প্রান্তিক জনজীবন। লবণ পানি এবং লবণ মাটির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় উপকূলীয় অঞ্চল পদ্মপুকুর ইউনিয়নবাসীর। নদী সংযোগ ইউনিয়ন হওয়াতে এখানে চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা অনেক বেশি এবং কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। সুপেয় পানির আধার সংরক্ষণে উপকূলীয় অঞ্চলে পুকুর পুনঃখনন করার কোন বিকল্প নেই।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/08/33.jpg)
উপকূলবাসীর এই সমস্যা অনুধাবন করে বারসিক তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে এসব মানুষের পাশে থাকার। এই বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে তাই সম্প্রতি পাখিমারা গ্রামের একটি পুুকুর পুনঃখননে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। মূলত সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের মো. আব্দুল আজিজ গাজীর (গাজী বাড়ির পুকুর) পুনঃখনন করার জন্য বারসিক সহযোগিতা করে। পুকুরটি আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ বছর আগে খনন করা হয়েছিল। পুকুরটির দৈর্ঘ্য ৯৫ ফুট এবং প্রস্থ ৮৩ ফুট।
এলাকাবাসীর মতে, পুকুরটি পুনঃখননের ফলে সুপেয় পানি সংরক্ষিত হবে এবং ১৫০ পরিবার এই পুকুর থেকে পারিবারিক সমস্ত কাজে মিষ্টি পানি ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। তারা মনে করেন, পুকুরের মিষ্টি পানি ব্যবহার করে সারাবছর বসতভিটায় মৌসুমভিত্তিক ঢেঁড়ষ, পুইশাক, ঝিঙ্গে, লাউ, ডাটাশাক, বেগুন, সরিষা, বীটকপি, ওলকপি, হলুদ, ঝাল, লালশাক, মূলা, পালংশাক, টমেটো, মৌরী, তরুল, কুশি, ওল, কচুরমুখী, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কলমিশাক, শসা, কাকুর, শিম, সজিনা ও উচ্ছে চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা যেমন পূরণ করতে পারবে তেমনি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারবেন।
এছাড়া পুকুরের পানি ব্যবহার করে আবাদকৃত শাকসবজি চাষে পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। প্রতিবেশিদের সাথে এক ধরনের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের স্থানীয় কৃষি প্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর জীবনযাত্রা পুনঃগঠনে স্থানীয় মানুষের বেঁচে থাকার শক্তি-সাহস ও সংগ্রামকে আরো বেশি শক্তিশালী ও উদ্যোগী করে তুলবে।