হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে চায় মাছখোলার নারী সংগঠনের সদস্যরা
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক ও মাহিদা মিজান :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা একটি জলাবদ্ধতা কবলিত গ্রাম। গ্রামটি প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। বছরের প্রায় ৩ থেকে ৪ মাসই জলাবদ্ধতা গ্রাস করে রাখে গ্রামটিকে। গ্রামের মানুষ এই অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে বেশ কিছু বছর ধরে। মাছখোলা গ্রামের মানুষ ভাবছিল বেতনা কাটলে বুঝি জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখছে তার উল্টো, বেতনা নদী কেটে হয়েছে খাল। দখল হয়ে গেছে বেতনার তীর। কেউ করেছে ঘের, কেউ বানিয়েছে ঘর, কেউ হেকেছেন ইটভাটা। আর আমরা যারা গরিব মানুষ, তাদের নেই কোন জায়গা, ঠাঁই নেই মাথা গোজার। এখন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তাকালে দেখা যায় শুধু জলাবদ্ধতার দৃশ্য। শস্যহীন এক বিলের চেহারা। অথচ এখানে জন্মাতো সোনালী ধান, তিল, বহু জাতের শাক-সবজি। এখন সবই স্বপ্ন। চারিদিকে শুধু পানি, নোনা (লোনা) পানি, জন্মায় শুধু চিংড়ি; যা কেবল বিত্তবানদের জন্য। নোনা পানির দাপটে খাবার পানিও নেই কৃষকের ঘরে। জলাবদ্ধতায় গিলে খেয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামকে। কৃষিবিহীন করে তুলেছে এই মাছখোলাকে।
উপরোকক্ত এই কথাগুলো বলছিলেন মাছখোলা গ্রামের মানুষেরা।
এ সময় দেখা দেয় কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট। প্রায় সারা বছর বিশেষ করে জলাবদ্ধতার সময়ে গ্রামের দুস্থ, বিধবা এবং অসহায় নারীদের কাটাতে হয় এক দুঃসহ জীবন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে গ্রামটিতে। গ্রামের টেকসই কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সমস্যা সমাধানে কাজশুরু করে মাছখোলা গ্রামের নারীদের সাথে একই সাথে তারা নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তোলে একটি নারী সংগঠন। যার নাম দেয় বেতনা কৃষি নারী সংগঠন। শুরু থেকেই সংগঠনটি তাদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত করে যাচ্ছে নানামূখি কর্মসূচি। আর তাদের সকল কর্যক্রম বাস্তবায়নে পিছন থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।
বেতনা নারী সংগঠনের সদস্যরা অধিকাংশ গৃহিনী ও কৃষক পরিবারের। তাদের অধিকাংশের স্বামীরা দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন। শস্যহীন গ্রামে নারীদের আয়ের কোন সুযোগ নেই। জলাবদ্ধতার কারণে পারে না হাঁস-মুরগি,গরু-ছাগল পালন করতে পারে না; এমনকি শাক-সবজি চাষও সম্ভব হয় না। এ কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই সংগঠনের নারীরা আলাদা পথ বেছে নেওয়ার মধ্যে হাতের কাজটি নির্বাচন করে। মাছখোলা বেতনা নারী সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন প্রকার হাতের কাজ করার ইচ্ছা ছিল বেশি। সেলাই মেশিন দিয়ে জামা কাপড় তৈরি, নকশী কাঁথা, পুঁতি দিয়ে জামা, ব্যাগ, ইত্যাদি তৈরি অন্যতম। তাই তারা হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল।
তাই নারী সংগঠনের সদস্যরা বারসিক’র কাছে হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শেলাই মেশিন দাবি করে। সংগঠনের নারীরা তাদের নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন, পরবর্তীতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বর্ধনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাদেরকে একটা সেলাই মেশিন প্রদান করে বারসিক। নারীরা সেলাই মেশিন দিয়ে হাতের কাজ শেখার জন্য আগ্রহসহকারে নিরলসভাবে লেগে আছে।
মাছখোলা বেতনা নারী সংগঠনের সভানেত্রী আশুরা খাতুন বলেন, “সেলাই মেশিন পেয়ে আমরা খুবই খুশি। মেশিন দিয়ে সংগঠনের সদস্যরা সরাসরি প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। আমরা নিজেদের পরিবারের প্রয়োজনীয় পোশাক নিজেরা প্রস্তুত করতে পারবো। কাজ শেখার পর আয় করতেও পারবো। আমরা নিজেরা হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে চাই।”
নারী সংগঠনের সদস্য আরিফা বলেন, “আমাদের স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। পড়ালেখার পাশাপাশি হাতের কাজ শিখতে পারবে। তিনি আরো বলেন, “বিশেষ করে বিকালের সময় আমাদের প্রায় কোন কাজ থাকেনা তাই যদি আমরা বিকালের সময়ে হাতের কাজ শিখি তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে।”
মাছখোলা বেতনা নারী সংগঠনের সদস্যেদের মত যদি সকল গ্রামের নারীরা কাজ নেই বলে বসে না থেকে হাতের কাজ শিখে তাহলে গ্রামের অভাব অনেকটা দূর করা সম্ভব।