প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় জন প্রতিনিধির সাথে মতবিনিময়
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ
গতকাল (১৯ ডিসেম্বর) রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীর সুরক্ষায় মতবিমিয় অুনষ্ঠিত হয়েছে। বারসিক ও রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদ যৌথভাবে উক্ত মতবিনিময় আয়োজনে সহায়তা করে। রিশিকুল ও খড়িয়াকান্দি গ্রামের ৩০ জন প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও সমাজে বিনোদনসহ বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের বিষয় তুলে ধরেন। একই সাথে তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকারগুলো নিশ্চিত করার বিষয় উপস্থাপন করেন। প্রবীণ ও প্রবিবন্ধীদের সমাজের বোঝা মনে না করে সমাজে তাদের সামর্থ অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ তৈরির বিষয়গুলো উঠে আসে।
মতবিনিময়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এই ধরনের কর্মসূচি হতে দেখা যায় না। এই কর্মসূচি আয়োজনের জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাই। আমি আপনাদের সমস্যার কথাগুলো শুনেছি। আপনারা আমার শ্রদ্ধাভাজন। আমি আপনাদের বেশির ভাগ চোখের সমস্যার কথা জানলাম। তাই আগামী জানুযারি মাসে আমার ইউনিয়নে একটি চক্ষু শিবিরের আয়োজন করবো ইনশাল্লাহ। তবে আমি আপনাদের অনেককেই কার্ড করে দিয়েছি। ইচ্ছে থাকা সত্তেও সকলকে একসাথে কার্ডেও সুবিধা দেয়া সম্ভব হবেনা। আগামী মাসে রোকেয়ার দুটি মেয়ে প্রতিবন্ধী। আমি কথা দিলাম আপনার একজনের কার্ড করে দিবো।’ একই সাথে অংশগ্রহণকারীদের যে কোন সমস্যার জন্য সরাসরি আসার আহ্বান জানান এবং সামাজিকভাবে প্রবীণ প্রতিবন্ধীদের মর্যাদা রক্ষার আশ্বাস প্রদান করেন।
রিশিকুল গ্রামের প্রবীণ বদর উদ্দিন (৭২) বলেন, ‘আমার সর্ব শরীরের হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, চোখে ভালোভাবে দেখতে পাই না। এলাকায় চোখের চিকিৎসা করানোর মত কোন ডাক্তার পাই না। জেলা শহরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মত টাকাও আমার নেই।’ একই বিষয়ে শোভা বেগম (৭৭) বলেন, ‘অন্যান্য রোগ শরীরে থাকলেও চোখে ভালোমত দেখতে পাই না। ফলে সংসারের কোন কাজ কর্ম সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হয় না। শুনেছি চোখের চিকিৎসায় অনেক টাকা লাগে তাই চিকিৎসা করতে পানিনি।’
দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের মা রোকিয়া (৪৬) বলেন, ‘আমার দুটি মেয়ে সন্তান। দুজনেই প্রতিবন্ধী। তাদের সব সময় দেখে রাখতে হয়, কখন কোথায় চলে যায় এই ভয়ে থাকতে হয় আমাকে। তাই সংসারের কোন কাজ ঠিকভাবে করতে পারিনা। দুটি সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ার ফলে সমাজের সবাই আমাকে অবহেলার চোখে দেখে থাকে। তাই প্রতিটি মূহর্তে মা হয়ে অবজ্ঞার জীবন নিয়ে আমাকে সমাজে বসবাস করতে হয়।’
মতনিনিময়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইলাম টুলু, সচিব জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান ও গোলেনুর, বারসিক সহায়ক জিন্নাতুননেছাসহ গ্রাম থেকে আসা অংশগ্রহণকারী প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠানটিতে সঞ্চালনায় সহায়তা করেন বারসিক প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম শহিদ।