নাগরিক সচেতনতাই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে পারে দেশ
মানিকগঞ্জ থেকে কমল চন্দ্র দত্ত
‘ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া থেকে মুক্ত থাকুন বাড়ির চারপাশ পরিস্কার করুন’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের উচুটিয়া লৌহকার পাড়ায় ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা ধ্বংসের জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। উচুটিয়া মা সমিতি ও বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টার যৌথভাবে এ অভিযানের আয়োজন করে।
অভিযান শুরুর আগে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন বারসিক মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। ডাবের খোসা, দইয়ের হাড়ি, ভাঙ্গা মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, ফুলের টব,বাড়ির আশেপাশের ড্রেন, চিপসের প্যাকেটসহ যেখানে পরিস্কার পানি জমে থাকে সেগুলো নিয়মিত অপসারণ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া যার যার বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, উঠানের আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। দিনে ও রাতে ঘুমানোর অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এটা শুধু একটি পরিবারের কাজ নয়। সকলের কাজা। প্রতিটি এলাকার সবাই মিলে এ ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে গেলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।’
আলোচনায় উচুটিয়া মা সমিতির সভাপতি কবিতা রাণী কর্মকার বলেন, ‘টিভিতে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা জানতে পেরে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি যথাসম্ভব পরিস্কার রাখার চেষ্টা করছি। মশারি টানিয়ে ঘুমাচ্ছি, মশার কয়েল ব্যবহার করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে আরও সচেতন হতে হবে। শুধুমাত্র ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে চলবে না, আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।’
বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার মাসুদুর রহমান এডিস মশা, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয় দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এডিস মশা বড় কালো রংয়ের, এরা সাধারণত ভোর বেলা ও সন্ধ্যার দিকে বেশি কামড়ায়। এ সময় আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবার আসতে পারে। সাথে কপাল ব্যথা, চোখের পাতায় ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন হাড়ে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বর হলে উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই, সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। জ্বর আসার পর তিন দিন পর্যন্ত শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ঔষধ খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সরকারিভাবে হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরের ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আলোচনা শেষে র্যালি করার পর উচটিয়া মা সমিতির সদস্যবৃন্দ, এলাকার সচেতন নাগরিক ও বারসিক কর্মকর্তাগণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকের ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে পারে।