বিশ্ব মা দিবস: সকল মা হোক সকল সন্তানের অভিভাবক
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল রায় ও শাহিনুর রহমান
জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে৷ তাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়ত কোনো প্রয়োজন নেই৷ তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ই মে থেকে৷ সঙ্গে নানা ধরনের উপহার দিয়ে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন সন্তানরা।
সাধারণভাবেই দেখা যায়, বছরের অন্যন্য দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তাঁর জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন৷ মায়েদের জন্য আলাদা করে কোনো উপহারের প্রয়োজন পড়েনা সত্যিই তারপরও এদিন সন্তানরা মাকে উপহার দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তাঁরা যে সন্তানের মুখে শুধুমাত্র ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান। মা ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের দয়া সহানুভূতির চেয়েও যার ভালোবাসা বেশি তিনিই হলেন মা। শত ত্যাগ ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা বড় করে তোলেন সন্তানকে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খেতে দেন। মায়ের স্মৃতি বহন করেই সন্তানের বেঁচে থাকা, মায়ের একটা শরীরই হলো তার সন্তান। নিজে শত কষ্ট সহ্য করলেও সন্তানের সামান্য কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না।
সন্তানের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক মা। একজন মা সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, নিজেকে তিলে তিলে বিসর্জন দেন। এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও আমরা মা’কে যথাযথ সম্মান করি না। বিশ্বজুড়ে আজ মা’য়েরা অবহেলিত, সন্তানরা খারাপ আচরণ করে। বয়স হলেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। দেশে বৃদ্ধাশ্রম দিন দিন বাড়ছে, ইউরোপ আমেরিকায় এটা খুবই সহজ। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়ের খোঁজখবরও নেয় না উদাসীন সন্তানরা।যে মা না হলে আমাদের পৃথিবীতে আসা কল্পনা করা যায় না সে মায়েরা কী আজ ভালো আছেন? তাদের সবাই কী তিনবেলা খাবার পাচ্ছেন? বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা কী তাদেরকে ঠিকমতো সেবা দিচ্ছেন? উত্তরটা হ্যাঁ ও না দুটিই হতে পারে।দেশে আজ শত মা নিজ সন্তান দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। সন্তানের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। যে মা দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে সন্তানকে রেখেছেন এবং ছোট থেকে বড় করে তুলেছেন সে মায়েরা আজ সন্তানের কাছে ভালো ব্যবহার পান না। সন্তানের বিরাট অট্টালিকা থাকলেও মায়ের জন্য একটি কুঁড়ে ঘরেরও ব্যবস্থা করেন না। সন্তান বউ নিয়ে তিন বেলা পোলাও মাংস দিয়ে খাবার খেলেও মায়ের জন্য সাদা ভাতের ব্যবস্থাও হয় না। কিন্তু কেন? এর নাম কী মা-সন্তান সম্পর্ক?
মা একজন নারী। একজন নারীকে মায়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এখন একজন নারীকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আর এই পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে নারীকে পদে পদে হোচট খেতে হয়।কখনো কখনো দেখা যায়,নিজ কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,পরিবহনে, যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকে।কাজেই প্রতিটি সন্তানের মা হিসেবে একজন মা ও নারীর নিরাপদ পরিবেশ তৈরির প্রত্যয়ই হোক এবারের মা দিবসের প্রত্যাশা। সকল মা হোক সকল সন্তানের অভিভাবক।