কেঁচো সার উৎপাদন করে সাবলম্বী রহিমা বেগম
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
রহিমা বেগম কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী। এ সারকে ভার্মিকম্পোস্ট বলা হয়। ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করে ক্রমেই চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন রহিমা বেগম। স্বল্প মূলধনের কেচোঁসার তৈরির পদ্ধতিকে ছড়িয়ে দিতে চান মানুষের কাছে। প্রতি মাসে কেচোঁসার বিক্রি করে তিনি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/02/20230124_094540.jpg)
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের কালিগংঙ্গা নদীর তীরে জাবরা গ্রামে রহিমা বেগমের (৫২) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পূর্বদিকে বাঁশতলার নিচে একটি টিনের চালা। ওই চালাতে তিনি কেঁচোসার উৎপাদন করে থাকেন। রহিমা বেগম বলেন, ‘২০১৮ সালে তিনি প¦ার্শবতী তরা গ্রামের এক কৃষক মো. এমদাদুল হকের ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন দেখে অনুপ্রাণীত হন। তারপর বানিয়াজুরীর জাবরা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা আক্তার ও বিপ্লব কুমার সরকার কিছু কেঁচো সংগ্রহ করে দিলে অল্প পরিসরে পাঁচটা পাত্রে কেঁচো সার তৈরি করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেঁচো আবার ছায়া বা অন্ধকার জায়গা পছন্দ করে। এভাবে এক মাসের মধ্যে তৈরি হয় ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার। আমার এখানে এখন চল্লিশ হাজার টাকার বেশি কেঁচো সার রয়েছে। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা করে বিক্রি করি। এক কেজি কেঁচো ছয়শত টাকায় বিক্রি করি। অল্পসংখ্যক হলে কেঁচো ২ টাকা পিচ হিসেবে বিক্রি করি। আমার সংসার ভালোই চলতেছে।’ তিনি ভবিষ্যতে খামারে আরো বেশি পরিমাণ কোঁচো সার উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি বারসিক’র বিভিন্ন কর্মএলাকায় গিয়ে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। প্রথমদিকে কেচোঁসার বিক্রি একটু কষ্ট হলেও বারসিক’র সহযোগিতায় এখন কেচোঁ ও সার বিক্রি ভালোই হচ্ছে তাঁর বলে তিনি জানান।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/02/20230202_103852-1024x511.jpg)
তিনি বলেন, ‘কিভাবে কেঁচো সার করি তা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আমার এ খামার মানুষ আসতেছে। এটা আমার কাছে ভালোই লাগে। আমি চাই নারীরা এগিয়ে আসুক। নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াক আর নিজেদের চাহিদা পূরণ করুক। এ সার উৎপাদন করে আমার মত তারা স্বাবলম্বী হোক। সহজেই কম পুঁজিতে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। এখন বাজারে রাসায়নিক সারের চাহিদা বেশি। এতে জমির মাটির উরর্বতা কমে যাচ্ছে। আবার দামও বেশি। সেখানে ভার্মিকম্পোষ্ট গোবর পদ্ধতিতে তৈরি একটি সার। এ সারের দামও কম। তাই স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সারটি জনপ্রিয় হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।’ অন্যদিকে এলাকার বাসিন্দা খোকা মিয়া জানান, আমাদের এলাকার রহিমা বেগম বাড়ি বসে সার বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছে। এটা আমাদের কাছে প্রশংসার। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বরুন্ডী গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমি বড় আকারে কেঁচো সার উৎপাদন করতে চাই। তাই বারসিক ঘিওর অঞ্চলের কর্মকর্তা সুবীর কুমার সরকারের সহযোগিতায় রহিমা বেগমের বাড়ি হতে ৮ কেজি কেচোঁ সংগ্রহ করি।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ। ক্রমেই মাটির প্রাণ হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমরা জৈব সার প্রয়োগের উপরে জোর দিচ্ছি। কেঁচো সারে ফলন ভালো হয় এটা প্রমাণিত। তাই আমরা চাষিদের সবজি খেতে ও ফলের বাগানে ভার্মিকম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে বলি।’ সুবীর কুমার সরকার বলেন, ‘জাবরা গ্রামে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হচ্ছে। ভার্মিকম্পোস্টকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। জৈব সারের যতই ব্যবহার বাড়বে ততই ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসবে। ততই এলাকার প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা পাবে।’