১৬, ২১ আর ২৬‘র ফুল ফোটান আয়নাল
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ
১৬, ২১, আর ২৬‘র ফুল ফুটান আয়নাল হক। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল গ্রামে তাঁর বাড়ি। আয়নাল (৩১) স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তানসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিবার তাঁর। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরিরত আছেন। এছাড়াও স্থানীয় আনসার ভিডিবি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অফিসের কাজ শেষে অবসর সময় কাটানোর জন্য নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ের সামনে একটি ফুলের বাগান গড়ে তুলেছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাঁর এই উদ্যোগে সহায়তা করে থাকেন। তার উদ্দেশ্য মানুষের প্রয়োজনে ফুল দিয়ে সহায়তা করা। বিভিন্ন দিবস উৎসব পালনে এই বাগান থেকে ফুল গ্রহণের জন্য ছুটে আসেন এলাকার মানুষ। আর ফুল দিয়ে সহায়তা করে এক ধরনের তৃপ্তি পেয়ে থাকেন আয়নাল। বিশেষ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ই ডিসেম্বর ও ২৬ শে মার্চ আসলেই ফুল নেয়ার জন্য ভিড় জমান তরুণ ও তরুণীসহ বিভিন্ন মানুষ। তাদেরকে অর্থ ছাড়াই ফুল সহায়তা করে থাকেন তিনি।
এলাকার বর্তমান প্রজন্মের কাছে জাতীয় দিনগুলোর চেতনা ও গুরুত্ব জানার আগ্রহী করতেই তার এই আয়োজন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষা অর্জন করেছি। ভাষা অর্জনের চেতনা থেকেই ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পেরেছি। দীর্ঘ সময় কষ্ট আর লাখো জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের গৌরব আনতে সক্ষম হয়েছি। এই সকল দিনের গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার কথা যেন কোন ক্রমেই আমাদের সন্তানরা ভুলে না যায়। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব একদিন নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে বলে তিনি জানান।
এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিতে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে জনপ্রতিনিধি বা কোন কর্মকর্তা আসলে বাগানের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এলাকার গ্রামীণ সংস্কৃতি রক্ষায় রয়েছে তাঁর ভূমিকা। ছুটির দিনে সেচ্ছায় অত্র এলাকার ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাটি, বদনসহ গ্রামীণ সকল ধরনের খেলাধুলা পরিচালনার দায়িত্বও পালন করে থাকেন। বাগানে নিজে চিকিৎসার জন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় ঔষধি গাছ রাখেন তিনি। আচিল ও নারীদের জরায়ু সমস্যাজনিত রোগ দুটির চিকিৎসা করে থাকেন। বিনামূল্যে সেই ঔষধ সরবরাহ দিয়ে থাকেন ।
ছোট্ট বাগানটি সম্পর্কে আয়নার বলন, “রবেন্দ্র অঞ্চলের মাটি এমনিতেই রুক্ষ, মাটিতে রস থাকেনা। এছাড়াও পানি সেচ দেয়ার তেমন কোন ব্যবস্থাও নেই। ঘাড়ে করে দুরের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে আমি ফুল বাগানটি রক্ষা করে চলেছি। একমাত্র নিজের আগ্রহ থেকেই কষ্ট করে এই ফুলগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। দীর্ঘ খরা হলে ফুল গাছগুলো অনেক সময় মরে যায়।”
আয়নাল হক নিজের খেয়ে বনের মহিশ না তাড়ালেও পারতেন। কিন্তু সমাজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মানুষকে সহায়তা করার এই প্রয়াস। তার এই প্রচেষ্টা টিকে থাকুক চিরদিন ও তার অনুসারী সমাজে বৃদ্ধি পাক এই কামনা রইলো।