হাওরে প্রবীণ দম্পতির প্রাণববৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষিবাড়ি
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
ভৌগোলিক কারণেই হাওরের মানুষ প্রাকৃতিক সকল দূর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে ঠিকে আছে যুগের পর যুগ। খরা, বন্যা, আগাম বন্যা, পাহাড়ি ঢল, আফাল, আফার, বজ্্রপাত, গরম, ঠান্ডা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘুর্ণিঝড়, কৃষি উপকরণের চড়া দাম, ফসলের মুল্য কম, পোকার আক্রমণ, বীজের সমস্যা, সেচের সমস্যা, শ্রমিকের অভাব, বাঁধভাঙ্গা পানি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, যোগাযোগ ও পরিবহন সমস্যা মোকাবেলা করে পাড়ি দিচ্ছে জীবনের কঠিন সময় হাওরের এই খাদ্য ও প্রকৃতি যোদ্ধারা। মদন উপজেলার উচিতপুর গ্রামের প্রবীণ দম্পতি আলী উসমনা। বয়স ৭০ বছর, তাঁর স্ত্রী আয়শা খাতুনকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি সবুজ বাড়ি। বাড়িতে সীম, শীতলাউ, মিষ্টিলাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করল¬া, শশা, পেঁপে, পুই, আলু, ডাটা, লালশাক, ধুন্দল, বেগুন, চালকুমড়া, মরিচ, বরবটি, ঢেড়স, সহ নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। তিনি সাত শতাংশ বসতবাড়িতে কাজের পাশাপাশি গড়ে তোলেন এই সবুজ কৃষিবাড়ি। বাড়িতে আছে আম, জাম, কাঁঠাল, আমড়া, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, বড়ই, কমলা, নারকেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, ডালিম, মেহেদী, কলা, বাংগিসহ অনেক দেশীয় ফলের গাছ।
প্রকৃতিকে রক্ষা করলে প্রকৃতিই আমাদের রক্ষা করবে। ৬০ এর দশকের পরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ও উন্নয়নের নামে প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী পদক্ষেপের ফলে স্থানীয় ধান, সবজি, মাছ ,প্রাণী সহ সকল প্রাণবৈচিত্র্য আজ বিপন্ন। উন্নত কৃষির নামে আমাদের কৃষকদের আপন জ্ঞান অভিজ্ঞতায় গড়া স্বনির্ভর,পরিববেশবান্ধব, কৃষকনিয়ন্ত্রিত কৃষিকে করে তোলা হয়েছে সার বিষ নির্ভর পরনির্ভরশীল বাণিজ্যিক কৃষিতে।
যেখানে কৃষকের দীর্ঘদিনের জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে করে তোলা হয়েছে মূল্যহীন। প্রকৃতিকে করে তোলা হয়েছে বিপন্ন।
এত বিপন্নতা আর বিনাশের কালে এখনও এই প্রবীণ দম্পতি বৈচিত্র্যময় শস্যফসল চাষ করেন, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেন স্বনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাসহ প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছে নিরন্তর। অনেকেই আসেন প্রবীণ দম্পতির বাড়ি বিষমুক্ত শাকসবজি কিনে নিতে। প্রবীণ উসমান চাচা বলেন, “আমি আমার বাড়িতে আরো যত দেশীয় ফলের গাছ আছে তা রোপণ করতে চাই। সবজি চাষ করতে চাই।” তিনি তাঁর বাড়িতে কেচো সারের পদ্ধতি স্থাপন করতে চান। এই প্রবীণ দম্পতির মনে প্রাণে যে সবুজ চিন্তা, মন মানসিকতা তা আমাদের সকল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।