শীতবস্ত্র হাওরের প্রবীণ ও নারীদের মনে প্রশান্তি দিয়েছে
নেত্রকোনা থেকে সোয়েল রানা
চলতি শীত মৌসুমে সমতল এলাকায় শীতের প্রকোপ অনেকটা কম, কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের শীতে নাকাল অবস্থা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যে নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকা এবং হাওরাঞ্চলে শীতের মাত্রা অন্যান্য সমতল এলাকার চেয়ে অনেকটা বেশি। প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জনগোষ্ঠীর নিকট শীতের মাত্রা সহনশীল হলেও দরিদ্র পরিবারের জনগোষ্ঠীর নিকট শীত অসহনীয় পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায়। রাতের বেলায় এসমস্ত অঞ্চলে শীতের মাত্রা আরও বেশি। হাওরাঞ্চলে গাছপালা অনেক কম থাকায় এবং বাতাসের প্রবাহ বেশি থাকায় শীতের মাত্রা বেশি। বিশেষভাবে হাওরের দরিদ্র প্রবীণ নারীদের রাত শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে কাটে।
এলাকার দরিদ্র প্রবীণ ও নারীদের শীত নিবারণে এগিয়ে আসেন এলাকার কিছু প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বারসিক’র সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে কিছু শীতবস্ত্র সহায়তার অনুরোধ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী গ্রমের প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের (চেয়ারম্যান, মেম্বার) চাহিদার ভিত্তিতে গ্রামের ১৬ জন দরিদ্র প্রবীণ ও নারীকে বারসিক এর সহযোগিতায় সম্প্রতি শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
শীতবস্ত্র বিতরণ উপলক্ষে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের উদ্যোগী প্রবীণ মো. শুক্কুর আলী বেপারী’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন আব্দুল হান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক মদন রির্সোস সেন্টার’র সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা সোয়েল রানা।
গোবিন্দশ্রী গ্রামের কিছু উদ্যোগী প্রবীণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের চাহিদার ভিত্তিতে বারসিক’র সহযোগিতায় ১৬ জন দরিদ্র প্রবীণ ও নারীকে একটি করে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য নির্বাচিত ১৬ জনের সকলেই দরিদ্র ও প্রবীণ, যারা বৈচিত্র্যময় ফসলের প্রায়োগিক গবেষণার মত উদ্যোগের সাথে যুক্ত। এই প্রসঙ্গে গোবিন্দশ্রী আব্দুল হান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দাতা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বারসিক গ্রামের দরিদ্র প্রবীণ ও ভূমিহীন নারীদের জন্য শীতবস্ত্র দিয়ে সহাযতা করায় এসব প্রবীণ ও নারীরা রাতের বেলায় শীত লাঘবে সক্ষম হবে। প্রবীণরা রাতে আরামে ঘুমাতে পারবে।’ কৃষাণী ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি (মেম্বার) হেলেনা আক্তার বলেন, ‘গ্রামের দরিদ্র প্রবীণ ও নারীরা শীতের শুরু থেকেই শীতবস্ত্রের দাবি করে আসছিলেন, কিন্তু কোথাও থেকে শীতবস্ত্র সহায়তা না পাওয়ায় তারা রাতের বেলায় শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। আজ বারসিক তাদের জন্য শীতবস্ত্র সহায়তা করায় রাতে তারা আরামে ঘুমাতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বারসিককে এ ধরণের মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বারসিক আজ যে ১৬ জন প্রবীণ ও নারীদেরকে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। বারসিক’র শীতবস্ত্র সহায়তার ফলে এই প্রবীণ ও নারীরা রাতের বেলায় শীত নিবারণ করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হবে।”
বারসিক’র সহযোগি সমন্বয়কারী শংকর ¤্রং আলোচনায় বলেন, ‘বারসিক মূলত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান মানুষের শক্তি, কর্মস্পৃহা, জ্ঞান ও সক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, যেখানে সবাই শান্তিতে, আপন মর্যাদায় এবং বৈচিত্র্যময়তায় বসবাস করতে পারে। প্রাণীতে বৈচিত্র্য, উদ্ভিদে বৈচিত্র্য, মানুষে মানুষে বৈচিত্র্য, আর এ বৈচিত্র্যময়তার মধ্য দিয়ে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সবাই স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভালো থাকবে এটাই বারসিক বিশ্বাস করে এবং এটাই বারসিক’র প্রত্যাশা। বারসিক কর্মএলাকায় সংগঠিত কৃষক, নারী, পেশাজীবী, যুব, কিশোর, আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায় ও পেশার মানুষের সংগঠনগুলো এবং নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।