পাওয়া ঘরগুলোকে পুষ্টিঘরে রূপান্তর করছেন ভূমিহীন পরিবারগুলো
রাজশাহী থেকে আয়েশা তাবাসুম
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় চাপড়া গ্রামের ২ বিঘা খাস জমি। এই জমিটি সরকার কর্তৃক ভূমিহীন ১২টি পরিবারের মধ্যে পত্তন করা হয়। তার মধ্যে ৯টি আদিবাসী পাহান পরিবার এবং ৩টি হিন্দু পরিবারের বসবাস। এ ১২টি পরিবার নিয়ে এ গ্রামটি গঠন হয়েছে। ১২টি পরিবার এর ছোট বড় মিলে প্রায় ৩০ জন মানুষ বসবাস করেন। তারা সবাই দিনমজুর। তাদের সন্তানেরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত।
৩০ জন নারী ও পুরুষের জন্য এই গ্রামে একটি খাবার পানি জন্য টিউবওয়েল ও স্যনিটেশন এর জন্য একটি পায়খানা রয়েছে, যা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। একটি ছোট ডোবা রয়েছে তাতে তারা গৃহস্থালি নানা কাজ এবং গবাদিপশুর ধোয়ানোর জন্য ব্যবহার করেন। ৩০ জন নারী পুরুষের জন্য যে পায়খানা রয়েছে সেটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গ্রামের নারীরাও দিন মজুরি করে সংসার চালান। তাই দিনের বেশিরভাগ সময়ই তারা মাঠে থাকেন।
তবে যেটুকু সময় তারা বাড়িতে থাকেন সেই সময়টুকু ব্যয় করেন সবজি চাষে। এই গ্রামে সবার জন্য একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে কিন্তু এখানকার নারীরা সেই ঘরগুলোকে রূপান্তর করেছেন এক একটি পুষ্টি ঘরে। তাদের টিন, খড়, তালপাতার বেড়ার ঘরগুলো দেখলে মনে হয় বিভিন্ন সবজি গাছ দিয়ে বেড়া দেয়া।
এই গ্রামের একজন প্রবীণ নারী পূর্ণীমা রানী (৫০) বলেন, ‘আমাদের আগে কোন স্হায়ী ঠিকানা ছিলোনা। এখানে এসে আমরা নিজের মতো করে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অতো টাকা নাই। আমরা দিন কাজ করি দিন খাওয়ার ব্যবস্থা করি। যেদিন কাজ থাকেনা সেদিন খাওয়ার ও ব্যবস্থা হয় না। চাল, ডাল তেল কিনার টাকা থাকে না। আবার সবজি কিনতে হলে খুব কষ্ট হয়। তাই আমরা আমাদের নিজের কিছু বীজ এবং বারসিক’র থেকে পাওয়া কিছু বীজ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করি। এখন আমাদের এই ১২টি পরিবারের কাউকেও বাজার থেকে সবজি কিনতে হয় না। এতে করে আমাদের সংসারের বাড়তি ব্যয় কমেছে।’
তিনি জানান সবজির ফলগুলো থেকে তাঁরা বীজ সংরক্ষণ করেন পরবর্তী সময়ে সবজি চাষ করার জন্য। নিজেদের মধ্যেও তাঁরা বীজ ও বিভিন্ন সবজি বিনিময় করেন। নিরাপদ সবজি চাষ ও খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে অনেক অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে তারা মনে করেন।