পদ্মাপাড় দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে রাজশাহীর তরুণরা
রাজশাহী থেকে আতিকুর রহমান আতিক
দখল আর দূষণমুক্ত করে পদ্মাপাড়ের পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য্য সুরক্ষা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর স্থানীয় সচেতন তরুণেরা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির বরাবর রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের পক্ষ থেকে সাতদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) তাঁদেরকে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটির তরুণেরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সবুজ ও নির্মল বায়ুর শহর শিক্ষানগরী রাজশাহী। এ শহরের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পদ্মাপাড়। রাজশাহীর বড়কুঠি থেকে বুলনপুর ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া। দীর্ঘ প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মাপাড়। শুধু শহরের স্থানীয়রাই নয়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজশাহীতে বেড়াতে আসা মানুষগুলোও পদ্মাপাড়ে আসে বিনোদনের জন্য। শীত গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সবসময়ই বিনোদনপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত পদ্মাপাড় মুখরিত থাকে দর্শনার্থীদের পদচারণায়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, দুঃখজনক হলোও সত্য যে, স্বাভাবিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য সংকটে পর্যটন এলাকা পদ্মাপাড়। একদিকে স্থানীয় কিছু অসাধু মানুষের দৌরাত্মের প্রভাবে পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন স্থানে নদী সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধের উপরে এবং দুই পাশে চলছে গরু, ছাগল এবং ভেড়া পালন, মেলে দেয়া হচ্ছে কাপড় আর বিভিন্ন প্রবেশ মুখে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। ব্যবসায়ীদের জায়গা দখল আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পদ্মাপাড়ে বিনোদনের জন্য বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থীরা নির্মল বিনোদন থেকে যেমন হচ্ছেন বঞ্চিত তেমন হচ্ছেন ভোগান্তির শিকার।
পদ্মাপাড়ের পাঠানপাড়াস্থ লালনশাহ মুক্তমঞ্চ চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানগুলোতে সম্প্রতি সময়ে স্থানীয় মাদকসেবী ও বখাটেদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, উন্নয়নকর্মী ফাতেমা আলী মেঘলা, শ্রাবণী ইসলাম এবং তাদের বন্ধুরা গত ২ আগস্ট লালনশাহ মুক্তমঞ্চ এলাকাতে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
পদ্মাপাড়জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বাদামওয়ালা, চা-কফির দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য্য। এসব ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে ভ্রমণপিপাসুরা অসহায়। তারা পাড় দখলে নিয়েছে চেয়ার পেতে। পদ্মাপাড় ঘিরে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এসব ব্যবসায়ীর উৎপাতে। পাড়জুড়ে চেয়ারের সারি। পাড় সংলগ্ন রাস্তায় চেয়ার বসিয়ে চলাফেরা করা তো দূরে থাক অনেক জায়গায় বসার জায়গা পর্যন্ত রাখা হয়নি। মহানগরীর পদ্মাগার্ডেন থেকে টি-বাঁধ (টি-গ্রোয়েন) পর্যন্ত নদীর পুরো পদ্মাপাড় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে। হকার আর ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যে কোথাও স্বস্তি মেলে না। চেয়ার পেতে ইচ্ছামতো দখলে নিয়েছে পদ্মাপাড়। নিরিবিলি বসে থাকা তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়ার মতো রাস্তাও নেই। যদি কেউ যেতে চান, তাহলে যেতে হবে চেয়ার ডিঙিয়ে। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ এসব চেয়ারে বসেন। কিন্তু এসব চেয়ারে বসলেই দিতে হয় টাকা। জনপ্রতি ২০-১৫০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে চেয়ারে বসার জন্য। শুধু তাই নয়; এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে চেয়ারে বসা মানুষদের। টাকা দিতে ও পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। অনেক সময় শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে বলে তরুণ সংগঠন ইয়্যাসের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
পদ্মাপাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান বড়কুঠি পদ্মা গার্ডেনের প্রবেশ মুখে রয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ময়লা আবর্জনার ভাগারের কথা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে এ কারণে বিনোদন প্রেমীদের পদ্মা গার্ডেনে (ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক) আসা যাওয়ার সময় ময়লা আবর্জনার পচাঁ র্দূগন্ধ পোহাতে হয় বলেও জানানো হয়েছে। যা একদিকে পরিবেশ দূষিত করছে অন্যদিকে পর্যটকদেরকে ভোগান্তিতে ফেলছে এবং সবমিলিয়ে পর্যটন স্থান পদ্মাপাড় স্বাভাবিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য হারাচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে দাবি করেছে সংগঠনটি।
স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সীমান্ত নোঙ্গর, অবকাশ ও বাতায়নসহ বিভিন্ন নামে পদ্মাপাড় ও নদীতে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। যা প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করে তরুণ সংগঠন তাদের এসব স্থায়ী নির্মাণের বিষয়টিও খতিয়ে দেখার জন্য বলেছে স্মারকলিপিতে ।
তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোসাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশ, কোষাধ্যক্ষ আতিকুর রহমান আতিক এবং পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সুবাস কুমার শুভ এবং সাধারণ সদস্য রিনা খাতুন আজ (৯ অক্টোবর) সকালে গিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির-কে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি তরুণ নেতা ও সাংবাদিক শামীউল আলীম শাওন বলেন, ‘আমরা চাই না যে রাজশাহীর পর্যটন কেন্দ্রগুলো দখল আর দূষিত হয়ে যাক। তাই পদ্মাপাড়ের পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য্য সুরক্ষায় দখল ও দূষণমুক্ত এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দাবিতে আমরা এ স্মারকলিপি প্রদান করেছি।’ স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে দাবি বাস্তাবায়ন করবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন ইয়্যাসের সভাপতি তরুণ নেতা ও সাংবাদিক শামীউল আলীম শাওন।