বৈষম্যমুক্ত সমাজ বির্নিমাণে তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে মো. শহিদুল ইসলাম
‘তারুণ্যের শক্তি বৈষম্য থেকে মুক্তি’ এই শ্লোগানে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের বৃহৎ যুব তরুণ ঐক্য বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম এবং উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে বরেন্দ্র যুব সম্মেলন ও সম্মাননা ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪৬টি তরুণ সংগঠনের তিনশতাধিক তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। গত ৩ মার্চ রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে জাতীয় সংগীতের সংঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন শেষে শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এরপর একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে শহীদ এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়িাখানার মূল ফটকের সামনে দিয়ে ঘুরে শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। এরপর বরেন্দ্র যুব সম্মেলনের প্রথম পর্বের আলোচনা এবং তরুণ সংগঠনসমূহের বিগত বছরের কার্যক্রম, বর্তমান সমস্যা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো নিয় উপস্থাপন শুরু হয়। সকালের অধিবেশনে বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্ব মহিমায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। প্রথম পর্বে তরুণদের উদ্দেশ্যে পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন বীরমুক্তি যোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল মান্নান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ রায়, রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সফল উদ্যেক্তা সেকেন্দার আলী, পরিবেশপদক প্রাপ্ত আদর্শ কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. আইনুল হক, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ দৌলা, মুক্তি যুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু। প্রথম পর্বের আলোচনা শুরুর আগে এবারের বরেন্দ্র অঞ্চলের আহবায়ক মোসা. জরিনা খাতুন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। বরেন্দ্র যুব সম্মেলন এবং সম্মাননা অনুষ্ঠানের মূল ধারণাপত্র পাঠ করেন উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম।
প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের তরুণদের সংগঠনভিত্তিক আলোচনা শেষে বিকালে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলের যুব সংগঠনের আইডিয়া/ প্রকল্প প্রস্তাবনা কনটেস্ট উপস্থাপন করেন। এতে বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ রায়, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবু আহাম্মদ আল মামুন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমান।
আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস বলেন, ‘তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের সমাজ বৈষম্যমুক্ত হবেই। তরুণদের নিজেদের উন্নয়ন করতে হবে। জানতে হবে উন্নয়ন এবং অধিকার কি জিনিষ।’
আইডিয়া কনটেস্ট এ সেরা প্রকল্প প্রস্তাবনা নির্বাচিত হয় বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষাকেন্দ্রর প্রকল্প। এছাড়াও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প।
অতিথিদের আলোচনা শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ সংগঠনগুলোর সার্বিক তথ্য সম্মিলিত প্রকাশনা ‘উন্নয়ন সহযাত্রী’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর বরেন্দ্র যুব সম্মেলন ও সম্মাননা ২০২০ এর সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এবারের শ্রেষ্ঠ যুব ২০২০ নির্বাচিত হন যৌথভাবে ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস) এর সভাপতি শামীউল আলীম শাওন ও স্বপ্নপূরণ ফাইন্ডেশনের পরিচালক ডা. আমানুল্লাহ বিন আখতার আবিদ। শ্রেষ্ঠ যুব নারী ২০২০ হিসেবে নির্বাচিত হন মোসা. জরিনা খাতুন, শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক ২০২০ হিসেবে নির্বাচিত হন সূর্যকিরণ বাংলাদেশ সংগঠনের সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল, শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠন ২০২০ হিসেবে নির্বাচিত হয় রাজশাহী তানোর উপজেলার স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংগঠন।
সম্মাননা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে গম্ভীরা প্রদর্শন করেন বারনই লোকসাহিত্য পরিষদের গম্ভীরা দল। আদিবাসী সাংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিষয়ে নাচ ও গান পরিবেশন করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের শিক্ষার্থীগণ। এছাড়াও বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র পক্ষে নাটিকা, নবজাগরণ ফাইন্ডেশন, ইচ্ছেসহ বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের পক্ষে নাচ, গান , কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রাজশাহীর তানোর উপজেলার লোককবি আফাজ উদ্দিন কবিরাজ অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝেই মনোমুগদ্ধকর কবিতা আবৃত্তি করেন। সন্ধ্যায় বরেন্দ্র যুব সম্মেলন ও সম্মাননা ২০২০ এর আহবায়ক মোসা. জরিনা থাতুনেরর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।