বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু ন্যায্যতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপের দাবি তরুণদের

রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম
আঞ্চলিক ভিন্নতায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। উঁচু-নীচু মাঠ আর এঁটেল লাল মাটিসহ আবহাওয়ার ভিন্নতা রয়েছে এই এলাকাটিতে। তাই এই অঞ্চলের সমস্যা সম্ভাবনাগুলোও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে আলাদা। তাই এই অঞ্চলের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হওয়া দরকার স্থানীয় ভৌগোলিক দিককে বিবেচনা করে। একই সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত ও কার্যকর গবেষণার মধ্যে দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো তৈরি করা দরকার।

Md Shahidul Islam


জলবায়ু দুর্য়োগের কারণে বর্তমান বিশে^ নানামূখী সংকট দেখা দিচ্ছে। বৈশি^ক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতের কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও নানামূখী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, কৃষক, মৎসজীবীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের নানা পেশার মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। জলবায়ু পরির্বতনের কারণে বরেন্দ্রভূমির জনগোষ্ঠী নানামূখী ঝুঁকির সম্মুখীন। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিকভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছেনা। বরেন্দ্র অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনাবৃষ্টি, তীব্র দাপদহ, অধিক খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উপর প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার প্রাকৃতিক জলাধার তথা- খাল, খাড়ি এবং পুকুরগুলো লিজ দেয়ায় প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ রাসায়নিক কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আবার জলবায়ু পরিবর্তনে পানি সংকটের জন্য নানামূখী বাঁধার কারণে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনসহ এর সাবির্ক নেতিবাচক প্রভাব চুড়ান্তভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।


বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পানি বণ্টন নীতি, পানি অধিকার কার্যকরের দাবিতে সম্প্রতি রাজশাহী শহরের তরুণরা সাইকেল চালিয়ে তানোর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তরুণদের সাথে প্রতিবাদ সংহতির আয়োজন করেন। এর পর সকাল ১১ ঘটিকায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল মথুরায় এক নবীন প্রবীণ সংহতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের আয়োজনে এই প্রতিবাদ সংহতি অনুষ্ঠানে অধিক কার্বণ নিঃসরণকারি ধনী দেশগুলোর প্রতি লাল কার্ড প্রর্দশন, জলবায়ু সুরক্ষার গান, সাইক্লিং, কবিতা, খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদসহ কার্যকর পদক্ষেপের দাবি করেন তরুণরা।


উক্ত প্রতিবাদ সংহতি অনুষ্ঠানে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় শতাধিক তরুণ অংশগ্রহণ করেন। তরুণরা দাবি করেন- বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে দিনে দিনে খরা তীব্র তাপদহ, অনাবৃষ্টি এবং খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পানি বণ্টন নীতিমাল বৈষম্য এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়নের অভাবে প্রান্তিক মানুষ পানি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে গ্রাম শহরের মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রতি দিনে নষ্ট হচ্ছে। তরুণরা দাবি করেন পানি কেন্দ্রিক সমসার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের জলবায়ু ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা দ্রুত পানি বণ্টন নীতি প্রান্তিক মানুষ বান্ধব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। আগামী প্রজন্মকে নিরাপদ বরেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে তারা পানি সংকট সমাধানে স্থায়ী পদক্ষেপসহ প্রাকৃতিক জলবাধারগুলো সুরক্ষাসহ পদ্মা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে বৃহৎ আকারে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু এবং বর্তমান নেতিবাচক প্রভাব দিকগুলো নিয়ে কথা বলেন বারসিক গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যায়- বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পসহ শস্য ফসল উৎপাদনে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবগুলো লক্ষ্য করা গেছে।’ তিনি আরও বলেন- জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সংকটের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে কিন্তু এই ক্ষতিপূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।


বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরমের আহবায়ক রুবেল হোসেন মিন্টুর সভাপতিত্বে উক্ত প্রতিবাদি সংহতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব শাইখ তাসনিম জামাল, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ- সভাপতি সাবিত্রী হে¤্রম, প্রতিবাদী কবিতা পাঠ করেন- লোক কবি আফাজ উদ্দিন কবিরাজসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি সাবিত্রী হে¤্রম বলেন, ‘এখানে আদিবাসী বাঙালিসহ নানা পেশার মানুষ বসবাস করেন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ পানির সংকটের কারণে তাঁদের বৈচিত্র্যময় পছন্দের খাদ্য ও পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানি অধিকারের দিকগুলোও সংকোচিত হচ্ছে।’

happy wheels 2

Comments