একজন কৃষক হয়রত আলীর জৈব কৃষি
মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
মাটি ও পরিবেশ রক্ষার্থে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করলে মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মূলত মাটিকে সুস্থ রাখা এবং মানুষের জন্য ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্য থেকে কৃষক হযরত আলী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে আসছেন। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ব্রী- কালিয়াকৈর নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. হযরত আলীর এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকার কৃষকদের মাঝে।
ভেজাল রাসায়নিক সার বিষ ব্যবহারে পরিবেশ ও ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি ছাড়াও মানুষের জীবনও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। রাসায়নিক সার বিষ অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণের বৈচিত্র্য। কৃষক মো. হযরত আলী জৈব পদ্ধতিতে ধান, লাউ, চিচিংগা ডাটা, পুইশাক, কচু পেঁপে, আদা হলুদ, মরিচ ঝিংগাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি অঙ্গীকার করেছেন সাধারণ মানুষের কাছে ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য পৌছে দেওয়ার! তাই তো তাঁর এ উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো ভ্যান যোগে আশেপাশের কৈতরা, বাংগালা, বরন্ডি, ছোটকালীয়াকৈর, জামশা, বায়রা হাটে বিক্রি করেন। তাছাড়া তার সবজিতে ক্ষতিকারক কোন রাসায়নিক সার বিষ না থাকায় গ্রামের মানুষের কাছে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ তাঁর কৃষিপণ্য ক্রয় করা জন্য বেশ আগ্রহী উঠেছে। ইতিমধ্যে তিনি নিজের উদ্যেগে পরিবেশসম্মত ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থায় গ্রামের মানুষকে যুক্ত করার জন্য একটি কৃষক-কৃষাণী সংগঠন তৈরি করেছেন।
এভাবেই ২০১৩ সালের জুলাই মাসে প্রথমে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ছোট আকারে সবজি চাষ শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে হযরত আলী বলেন, “মাত্র ২টি গরু থাকলেই এক একর জমি বিষমুক্তভাবে চাষ করা য়ায়। আমার সবজি বাগানের এক একর জমিতে চারা, বীজ ও ফসল চাষ করি। আমি চাই আমাদের প্রয়োজনেই পরিবেশকে রক্ষা করার সাথে সাথে ভেজালমুক্ত খাদ্য খেয়ে সুস্থ জীবন ধারণ করুক সবাই।” বর্তমানে তাঁর ৩টি গরু রয়েছে যা দিয়ে প্রতিমাসে ১০ মণ সার উৎপাদন করতে পারেন বলে জানান। কৃষক হয়রত আলী বলেন, “অভাবের তাড়ণায় বেশি দুর লেখা পড়া করতে পারিনি। তাই কৃষকের সন্তান বলে বাবার কাছে শেখা কৃষি কাজকেই বেছে নিয়েছি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের সিড়ি হিসেবে।”
কৃষক হযতে আলী ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি দু’জন সন্তানের জনক। একসময় তাঁর মাত্র ২৯ শতাংশ বসতবাড়ি ছাড় আর কিছুই ছিলো না। তবে পরিশ্রম ও চেষ্টার গুণে আজ তিনি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছেন। ধনী কৃষকদের জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে তিনি জানান।
কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ থাকায় নয়াবাড়ি আদর্শগ্রামের কমলা বেগমের বাড়িতে জৈবসার তৈরি পদ্ধতি দেখার পর থেকেই তিনি নিজে জৈব সার উৎপাদন করতে শুরু করেন। জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে তিনি শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান হননি বরং মানুষ ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন।
এই প্রসঙ্গে সিঙ্গাইর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বলেন, “কৃষক হয়রত আলীর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে হযরত আলীর কৃষি বাগান একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ধরনের উদ্যোগ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।”