প্রবীণ দিবসে প্রবীণরা উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়ের গল্প শোনালেন নবীনদের

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারেও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই দিবসটি ভিন্ন ভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে। এবছরের প্রবীণ দিবেসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’।
এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সম্প্রতি উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কাশিমাড়ি গ্রামে স্বেচ্ছাসেবক টিম এসএসএসটি এর উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহায়তায় ‘বহু ঘূর্ণিঝড়ের স্বাক্ষী যারা বিষয়ে উপকূলীয় প্রবীণদের সাথে নবীনের আলাপ বিষয়ক মতবিনমিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় কাশিমাড়ি ও ঝাপলি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, উপজলো জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধি, এসএসএসটির সদস্য এবং বারসিক কর্মকতাসহ ২৩ জন নারী, ১২ জন পুরুষসহ মোট ৩৫ জন অংশগ্রহণ করেন।


সভায় জনসংগঠন সমন্বয় কমটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডলের সঞ্চলনায় উপরোক্ত বিষয়ের উপর বত্তব্য রাখেন প্রবীণ নারী সুফিয়া, আনোয়ারা, সাহিদা আমিরুন, ছফুরা, এসএসএসটির স্বপন ও হাবিবুর, কৃষক নেতা সিরাজুল ইসলামসহ প্রমুখ।


প্রবীণরা জানান, ‘আমরা উপকূলীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করি। এখানে বছরের বারংবার নানা ধরনের দুর্যোগ হয়ে থাকে। আর তার সাথে মোকাবেলা করে আমরা টিকে আছি। অতীতে আমাদের এলাকায় নানান ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর ছিলো। আজ যেন তা রুপকথার গল্প। এখানে যেমন ছিলো প্রাচীন নানান ঐতিহ্য, গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, প্রাকৃতিক জলাশয় ও পুকুরগুলোতে ছিলো হরেক রকমের মাছ, ছিলো নানা ধরনের ফল ও ফুল, নানান ধরনের সবজী, মসলা ও ডাল। আরো ছিলো বিনোদনের জন্য নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা। সব কিছুই যেন আজ হরহামেশেই শেষ হয়ে গেছে। আর এগুলোর বিলুপ্তর মূল কারণ হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লবণাক্ততা।’


অন্য প্রবীন ব্যক্তিরা বলেন, ‘এখনও দুর্যোগ হচ্ছে আমরা নানান ধরনের দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ের স্বাক্ষী। আমরা দেখেছি ১৯৮৮ সালের ঝড়, আইলা, রোহানু, মহাসেন, আম্পান, বুলবুলসহ আরো নানান না জানা অসংখ্য দুর্যোগ। আগেকার দিনের দুর্যোগগুলো ছিলো পাতলা আর এখন যেন ঘন ঘন দুর্যোগ হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের সেই দুর্যোগের কথা শুনলে এখনোই গা যেন কাঁপতে থাকে।’


অংশগ্রহণকারী নবীনরা জানান, ‘আমরা আজ এ গল্পের মাধ্যমে আমাদের উপকূলীয় এলাকার অতীতের চিত্র জানতে পারলাম। আগের মানুষ ভালো ছিলো তারা নানান বিনোদনের মধ্যে দিয়ে যেমন থাকতো। পাশাপাশি তারা ভালো পুষ্টিকর খাবার পেতো। সেজন্য তাদের রোগবালাই কম হতো। আর এখন আমাদের এলাকায় প্রতিটা পরিবারের নানান ধরনের অসুখে ভরে গেছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখনকার মানুষ যেন খিটখিটে হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে এখন ধৈর্য্য কমে গেছে। মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানান দ্বন্দ্ব।’


সবশেষ নবীন ও প্রবীনদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে। তার মধ্যে উল্লেযোযোগ্য হলো: নবীন ও প্রবীণ সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। উপকূলীয় বেড়ীবাঁধ মজবুত করা, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো উন্মুক্ত করা এবং জলাশয় ও সুপেয় পানির পুকুর পুনঃখনন করা, প্রবীণদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো, প্রবীণদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

happy wheels 2

Comments