পরিবারের পুষ্টি নিশ্চিতে ঘেরের বেড়িতে সবজির আবাদ
আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা থেকে
চারদিকে ঘের আর ঘের। মাছ হয়। কিন্তু ফসল নেই। তাই তো প্রাথমিকভাবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে ঘেরের বেড়িতে শাক-সবজি চাষ শুরু করেন আনিসুর রহমান। ক’দিন যেতে না যেতেই পরিবারের পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অংশ বাজারজাত শুরু করেন তিনি। আর তাকে দেখাদেখি ঘেরে মাছ ও বেড়িতে সবজি চাষ শুরু করেছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের সামসুর শেখ, আব্দুল্লাহ, আবু সাঈদ, সিরাজুলসহ অসংখ্য কৃষক।
শুধু তালা উপজেলা নয়, ঘেরে মাছ ও বেড়িতে সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গোটা সাতক্ষীরা জেলায়।
স্থানীয়রা জানান, নদী ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় জেলার অনেকাংশেই এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব জলাবদ্ধ এলাকায় আগে ধানসহ অন্যান্য ফসল ফললেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই অনেকে শুরু করেছেন ঘের ব্যবসা। আর তার সাথেই ঘেরের পাড়ে আবাদ করছেন শাক-সবজি। এতে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি পারিবারিক পুষ্টির চাহিদাও মিটছে।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু’ধারে ঘেরে মাছ ও পাড়ে সবজি চাষের চোখ জুড়ানো দৃশ্য।
কাটাখালি গ্রামের আনিসুর রহমান শেখ জানান, পাশের গ্রামের একজনের পরামর্শে তিনি তার ঘেরের বেড়িতে সবজি চাষ শুরু করেন। মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ করে ঘেরের বেড়িতে ঝুলন্ত মাচা করে ঢেঁড়শ, উচ্চে, কলা ও শসার আবাদ করেছেন তিনি। মাত্র দুই মাসে ৪৫ হাজার টাকার শসা এবং ঢেঁড়শ বিক্রি করেছেন তিনি। এখনো মাস খানেক সবজি উঠবে তার। এছাড়া ৪০টি কলা গাছের মধ্যে ৩৫টি গাছে কলার কাদি পড়েছে। যা প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া তার ঘেরে রয়েছে রুই, কাতলা, জাপানি পুটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ চাষ।
তার দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী ঘের মালিক সামসুর শেখ, আব্দুল্লাহ, আবু সাঈদ, সিরাজুলসহ অনেকেই ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ শুরু করেছেন। বেড়িতে বেড়িতে শোভা পাচ্ছে পুইশাক, লাউ, করলা, শসা, ঢেঁড়শ, কুমড়া, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, কলা, সিম, ঝিঙা, কচু, পেঁপেসহ নানা জাতের সবজি।
একই গ্রামের আবু সাঈদ জানান, আগে এখানে শুধুই ফসল হতো। তখন পরিবারে কোন কিছুর অভাব ছিল না। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে এখন মাছ চাষ ছাড়া অন্য কিছু সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে পরিবারের শাক-সবজি তথা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই বেড়িতে সবজি চাষ শুরু করেছি। এখন পরিবারের সদস্যরা ইচ্ছা হলেই সবজি তুলে নিয়ে যায়। আর বিক্রি তো করিই। দেই প্রতিবেশিদেরও।