‘আমাদের সংস্কৃতি সাথে মিশে আছে দেশীয় ধান’

সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
বারসিক’র উদ্যোগে মানিকগঞ্জসদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের বরুন্ডি প্রায়োগিক ধান গবেষণা প্লটে গতকাল মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষকগণ মাঠ দিবসের প্রায়োগিক ধান গবেষণা প্লটের মাদার ট্রায়াল ১২টি ও সংরক্ষিত ৬৯টি ধানের জাতের পর্যবেক্ষণ করেন। কৃষকগণ গবেষণা প্লট থেকে ৩১ জন কৃষক কালিজিরা, উকনী মধু, খেজুরছরি, কাইশ্যাবিন্নি, বর্গাদিঘা ধানের জাত বাছাই করেন। তাছাড়াও তাঁরা বন্যা বা বর্ষার পানি সহনশীল ভাইয়্যালা, কাইশ্যাবিন্নি ও বর্গাদিঘা ধান বাছাই করেন। কৃষকগণ মাঠ দিবসে আলোচনা করে জৈব কৃষি তথ্য আদান প্রদান করেন।


আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাটিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মাদল বিশ্বাস, সিংগাইর উপজেলার কৃষক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম, বারসিক প্রোগ্রাম অফিসার মাসুদর রহমান, কৃষক প্রিয়া রায়, কৃষক গবেষক বৈদ্যনাথ সরকার, কৃষক গবেষক শহিদুল ইসলাম, কৃষক গোসাই দাস রায়, কৃষক গুরুদাস সরকার ও বারসিক’র প্রোগ্রাস অফিসার সত্যরঞ্জন সাহা।


আলোচনায় কৃষকরা বলেন, বরুন্ডি প্রায়োগিক ধান গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা এলাকা উপযোগী ধানের জাত বাছাই করে থাকি। জৈব কৃষি চর্চার অভিজ্ঞতা সহভাািগতা করি। কৃষক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবেশসম্মত ও স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চা করি।’


আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, ‘কৃষকগণ জৈব কৃষির মাধ্যমে চাষবাস করে তাদের উৎপাদিত ফসল তথা ধান, পাট, গম, শাক সবজি, মসলা, তেল জাতীয় ফসল ভালো হয়। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন কৃষি বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে আবাদ করা। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করা। দেশীয় ধানই আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে থাকে। উচ্চ ফলনশীল ধানে ভাত হলেও চিড়া, মুড়ি, পিঠা হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক নয়।’ তারা আরও বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি সাথে মিশে আছে দেশীয় বিভিন্ন রকমের ধান। তেমনিভাবে কৃষকগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশীয় ধান সবচেয়ে বড় সহায়ক হিসাবে কাজ করে থাকে। মাঠ দিবসে কৃষকগণ বর্ষার পানি সহনশীল ভাইয়্যালা, কাইশ্যাবিন্নি ও বর্গাদিঘা ধান বাছাই করেন।


উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কখনোও অতিবৃষ্টি আবার কখনো পানির অভাবে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় কৃষকেরা সময়মতো ফসল ফলাতে পারেন না; আবার ফলানো ফসলও নষ্ট হয়ে যায়। বিগত সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিত্রাং-এ টানা দুই দিন বৃষ্টিতে মাঠের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। তবে জমির দেশীয় ধান ও দেশীয় ফসলগুলো বৃষ্টির পানি কমলে মাথাচারা দিয়ে উঠে। যে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়, কৃষক সেই জমিতে নতুন করে ফসল বোনেন। আস্তে আস্তে মাঠ হয়ে উঠে সবুজ। বারসিক কৃষকদের স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো উদ্যোগ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। বৈচিত্র্যময় ফসল আবাদে বীজ বিনিময় ও সংরক্ষণে উৎসাহিত করে।

happy wheels 2

Comments