জামাই মেলা

জামাই মেলা

মানিকগঞ্জ থেকে এম.আর.লিটন

প্রতিবছর ৬ষ্ঠ দোলের দিন বাংগালা মাঠে জামাই মেলার রীতি আয়োজন করা হয় বিভিন্ন কৃতিয়ানুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। মেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে বসে হরেক রকমের দোকানপাট। আয়োজনে ম্যারাথুন, তিন পর্যায়ে ঘোর দৌড়, সাইকেল রেইস যথারীতি নিত্যনৈমেত্তিক বিষয় এই মেলার অংশ।

10
এছাড়া বিশেষ আয়োজনে প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি দই তো থাকবেই। এ মেলার বিশেষ আকর্ষণ জামাই রীতি। কে কত বড় মাছ কিনবে এ মেলার রীতিতে চলে জামাইদের প্র্রতিযোগিতা। মেলার দ্বিতীয় দিনে মা-মেয়ে, বোন-বৌ-ঝিদের উপচে পড়া ভিড়ে পা রাখার ঠাঁই মেলেনা। মেলার দ্বিতীয় দিনটা মূলত মেয়ে মানুষের প্রাধান্য থাকে। বছরের এই দিনটায় বহু দূর দূরান্ত হতে আগত হয় মেয়ে, মেয়ের জামাতা। এ মেলার আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসে আশপাশের দশ গ্রামের লোকজন।

যুগ যুগ ধরে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই মেলা। মানিকগঞ্জের ঘিওরে বিভিন্ন মেলার মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক আয়োজন পশ্চিম মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাংগালা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই জামাই মেলা।
বহু দূরদূরান্ত থেকে এই গ্রামের মেয়ে, মেয়ে জামাতা, নাতী-পুতিদের নিয়ে এমন এক মেলা শতবর্ষর্ধোকাল যাবৎ রীতি পালিত হয়ে আসছে। জানা গেছে, দেশ স্বাধীনতার বহুকাল পূর্ব থেকে এ উপজেলার তেরশ্রী জমিদাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। সেই জমিদারের জমিদারী এখন আর নেই। ইতিহাসের পাতায় স্মৃতিতে অম্লাণ হয়ে আছে কিছু রীতিনীতি প্রথা। এরই অংশ হিসেবে অদ্যাবধি পশ্চিম মানিকগঞ্জে চলমান ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্যে জামাই মেলা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে বহুকাল ধরে।

মেয়ের জামাই, উকিল জামাই এবং বিভিন্ন সূত্রে জামাইদের নিয়ে এ মেলার আনন্দ উৎসব পালন করা হয়। যা পরবর্তীতে এক প্রথায় রূপ নেয়। এমনকি স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, বাড়ির কর্তাদের মেয়ে না থাকলেও মেয়ে জামাই বানিয়ে আপ্যায়নের আয়োজন করতো।

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, বাংগালা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী পঞ্চমী দোলের পরের দিন এ মেলা উদ্্যাপন করা হয়। তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায় প্রায় শতবর্ষর্ধকাল পূর্বে দোল মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে এবং দোল মেলায় জামাই আপ্যায়নের রীতি চালু করে। যা পরবর্তী সময়ে এই দোল মেলাই জামাই মেলার রূপ নেয়।
তথ্যসূত্র: সোহেল রানা ।

happy wheels 2

Comments