জৈব আগাছানাশক ব্যবহারে জমি ও ফসল ভালো থাকে
রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ
জমিতে রাসায়নিক আগাছানাশক ব্যবহার করলে জমির ধান লাল হয়। এছাড়া ধানের বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও এক পর্যায়ে থেমে যায়। এই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে মাটিরও ক্ষতি হয় বলে পরিবেশবিদরা বলেছেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের ভেতরে সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষকরা রাসায়নিক আগাছানাশকসহ কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে করে পরিবেশ তো ক্ষতি হচ্ছেই সাথে সাথে মাটির ভেতরে থাকার অণুজীবগুলোও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। এসব অণুজীব ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যেমন কেঁচো। এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের আলোকছত্র গ্রামের মজিদ খান বলেন,“আমরা জমিতে আগাছানাশক ব্যবহার করছি। ফলে জমির ধান লাল হওয়া ও ধান থেমে যাওয়ার বিষয়টি সকলের চোখে পড়ে। কিন্তু মাটির কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের কারো ধারণা নেই।” তিনি আরও বলেন, “অতীতে শহরের আবহাওয়া দূষিত ও গ্রামের আবহাওয়া দূষণমুক্ত মনে করা হতো। বর্তমানে জমিতে অতি মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে গ্রামের বাতাসও দূষিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই প্রক্রিয়া থেকে আমাদের বের হওয়া জরুরি।”
সম্প্রতি জৈবচাষ সম্পর্কে আগ্রহী কৃষকরা নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার ফতেপুর গ্রামে জৈবচাষ পদ্ধতিগুলো হাতে কলমে দেখে আসেন। রাজশাজীর তানোর ও গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলসহ তিনটি উপজেলার ৯ জন আগ্রহী কৃষক এই সফরে অংশ নেন। তাঁরা ফতেপুর গ্রামের কৃষকদের জৈবচাষ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে ধারণা নেন; সেই গ্রামের কৃষকদের সাথে আলোচনা করেন কীভাবে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে তাঁরা সফল হয়েছে। তারা শিখেছেন জৈব পদ্ধতিতে সার তৈরি, কীটনাশক তৈরি এবং আগাছানাশক তৈরির বিষয়টিও। তারা জেনেছেন গরুর মূত্র ও দেশীয় রসুন দিয়ে আগাছানাশক তৈরির প্রক্রিয়াও। এছাড়া জেনেছেন এসব আগাছানাশক ব্যবহারের বিধিও! নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় জৈব চাষ সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সংঘটিত এই সফরে গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের আলোকছত্র গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহীন উদ্দীন ও নেভী আবদুল মজিদ খানও যোগ দেন। ওই এলাকার কৃষকদের সফলতা তাদেরকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণীত করে। এই প্রসঙ্গে শাহীন উদ্দিন বলেন, “গ্রামের গরিব কৃষকরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ক্রয় করতে গিয়ে অধিকাংশ সময় ঋণের মধ্যে থাকেন। তাই গ্রামের কৃষকদেরকে জৈব আগাছানাশক সম্পর্কে ধারণা দিলে তারা বেশি উপকৃত হবে।” আগাছানাশকসহ জৈব পদ্ধতিতে সার ও কীটনাশক তৈরির প্রক্রিয়া দেখে কৃষক আলতাফ সরকার (৬৮) ও মনীর হোসেন (৩৫) বলেন, “এতো সহজ কাজ, আমরাও এবার ব্যবহার করবো। কারণ আমাদের বাড়িতে গরু আছে।”
ওই সফরে শিখে আসা বিষয়গুলো নিজের এলাকায় প্রয়োগ করেন ওই নয়জন। বিশেষ করে জৈব আগাছানাশক তৈরির বিষয়টি তাদের মনে বেশ দাগ কেটেছে। তারা পত্নীতলার কৃষকদের কাছ থেকে যেভাবে শিখে আসছেন সেইভাবেই আগাছানাশক তৈরি করেন। জমিতে প্রয়োগ করেছেন। এটা প্রয়োগের ফলে দেখা যায়, জমিতে নতুন আগাছা দেখা যায়নি। জৈব আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে জমির ধান লাল তো হয়ইনি বরং মাটির জৈব শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন। কারণ ধানের চারা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন রকম সমস্যাও তৈরি হয়নি। শিখে আসা বিষয়টি অন্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান আলতাফ সরকার, মনীর হোসেন ও মজিদ খানরা। যাতে করে কৃষকরা রাসায়নিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারেন এবং পরিবেশকে সুরক্ষা করতে পারেন। তারা মনে করেন, জৈব কৃষি অনুশীলিত হলে পরিবেশ তো ভালো থাকবেই পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবেন। কেননা কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে যাবে। এছাড়া বিষহীন খাদ্যশস্য ফলানো হলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যাবে।