আসুন বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই বন্ধের উদ্যোগ নিই
রাজশাহী থেকে আয়েশা তাবাসসুম
বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে এক স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র। তবে এই স্বাধীন রাষ্ট্রকে কিনতে হয়েছে অনেক ত্যাগ, রক্ত, ও জীবনের বিনিময়ে! আমরা বরাবরই বীরের জাতি। কোন বিপদ থেকে পিছুপা হইনা আমরা। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমরা দিয়েছি অদম্য সাহসিকতার প্রমাণ। কিন্তু হ্যাঁ এই আমরাই সবসময় হেরে যায় সামাজিক মূল্যবোধের কাছে। সামাজিক কুসংস্কার আর অবক্ষয় এর শিকল থেকে আমরা মুক্ত হতে চাইনা।বিশ্ব অনেক এগিয়েছে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া যুগেরও আমুল পরিবর্তন হয়েছে শুধু পরিবর্তন হয়নি আমাদের মানসিকতার।
বাল্যবিয়ে এমনই একটি সামাজিক ব্যাধি, যেখানে আমাদের চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় মিলে। ধীরে ধীরে আমরা পৌঁছেছি মধ্যম আয়ের দেশে। কিন্তু আমরা কি পৌঁছেছি মুল্যবোধের স্বর্ণশিখরে? বাল্যবিয়ের এই সমস্যাকে আমরা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম কিন্তু এই মাহামারি করোনা যেন সব কিছুকেই স্থবির করেছে। বদলে দিয়েছে জীবনযাত্রার মান। আমাদের ছিটকে এনে ফেলেছে ২০ বছর পিছনে। আজ মহামারি করোনার মতই মাহামারি আকার ধারণ করেছে বাল্যবিয়ে। আমাদের কমলমতি কিশোরীদের ঘাড় থেকে স্কুল ব্যাগ নামিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংসারের বোঝা। রংধনুর মত রঙিন জীবনকে মোড়ানো হচ্ছে দায়িত্বের সাদা কফিনে। তাদেরকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ তবুও থামানো যাচ্ছে না এই অপরাধটি। করোনাকালীন সময়ে এই অপরাধটি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমরা এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমাদের কিশোরীরা সবকটা দাঁতের মালিক হওয়ার আগেই স্বামীর মালিক হয়ে যাচ্ছে। একটি ছোট্ট জীবন, ছোট্ট স্বপ্ন কিন্তু একটি স্বর্ণউজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমরা একটু সচেতন হলেই এই ছোট স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। আমাদের অভিভাবকদের বুঝাতে হবে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে। একমাত্র সচেতনতাই দেখাতে পারে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ। তাই বাল্য বিয়ের দরজা বন্ধ করি, উন্মুক্ত করি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর স্বর্ণদার। সেই লক্ষে বাল্যবিয়ে বন্ধে বারসিক’র পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি গণসচেতনমুলক উঠান বৈঠক আয়োজন করা হয় এবং এখানে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় বারসিক প্রতিনিধি ও গ্রামের সচেতন মানুষেরা অভিভাবকদের বাল্য বিয়ের নানান কুফল সম্পর্কে যেমন সচেতন করার চেষ্টা করেছেন ঠিক তেমনি পরিবারে একটি মেয়ের শিশুর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সুশিক্ষিত হলে একটি মেয়েও পরিবারের বড় সহায় হতে পারে; বোঝা নয়। তাই স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা না হয়। তাদেরকে যেন সুযোগ দেওয়া হয় শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে।