বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি উৎসব
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব। উন্নয়নের যাঁতাকলে পরে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী একসময় পরস্পারিক জীবনধারায় নির্ভরশীল। মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সকল প্রাণ ছিল অন্তঃনির্ভরশীল। কিন্তু প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির এই পারস্পারিক নির্ভরশীলতা। মানুষ বিপদে-আপদে, সুখে- দুঃখে পরস্পরের পাশে দাঁড়াত। আধুনিকায়নের ছোয়ায় গতিশীল কর্মজীবনে মানুষ দিন দিন হারাচ্ছে তাদের নৈতিকতা। সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে নৈতিকতার অবক্ষয়, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদক, নারী নির্যাতন ও অশ্লীলতার মত নানান সামাজিক ও মানসিক ব্যাধি।
হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম পরস্পর নির্ভরশীল সেই গ্রামীণ বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা এবং নতুন প্রজন্মের জনগোষ্ঠীকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের বালি গ্রামের যুব সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে বাংলা নতুন বছর পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান উৎযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার (নবীন, প্রবীণ, শিশু, প্রতিবন্ধী ও ততৃীয় লিঙ্গের মানুষ) প্রায় ২০০০ জন লোক অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বালি গ্রামের সকল জনগোষ্ঠী যৌথভাবে আয়োজন করেন বাঙালির গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খাবার পান্তা ভাত খাওয়া অনুষ্ঠানের। পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালির প্রিয় খাবার হলেও বর্তমান প্রজন্মের সাথে পান্তা ভাতের পরিচয় নেই বললেই চললে। নতুন প্রজন্মের সন্তানদের সাথে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচিতি তৈরির লক্ষ্যেই যুব সংগঠন পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকালে যুব সংগঠনের নেতৃত্বে এক অনাড়ম্বর বৈশাখী র্যালি বালি গ্রাম থেকে শুরু করে নেত্রকোনা মুক্তার পাড়া পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। র্যালি শেষে প্রকৃতির সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সম্পর্ক ও পারস্পারিক নির্ভরশীলতা বিষয়ে এক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও ছিল ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ বিভিন্ন খেলাধূলা যেমন মইল্লা খেলা, কস্তুতি খেলা, জারি গান ও গ্রামীণ নৃত্য। বিভিন্ন বয়স, শ্রেণী, বিশ্বস ও পেশাজীবীর মানুষ অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আনন্দ উপভোগ করে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ আবু সুফিয়ান বলেন, “আগে কোন দিন এই রকম অনুষ্ঠান দেখি নাই। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে পারছি এবং পরস্পরের সাথে বিভিন্ন তথ্য বিনিময় করতে পাচ্ছি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী আরেক প্রবীণ নারী ফাতেমা আক্তার বলেন, “আজকে অনুষ্ঠানের আমরা সবাই এক সাথে খেলতে পারছি, আনন্দ করতে পারছি কারণ আমাদের আনন্দের কোন জায়গা নাই। আমরা সারাদিন ঘরের ভেতরের থাকি, রান্না বান্না ছাড়া আর কোন কাজ নাই। এই যুব সংগঠনের উদ্যোগে আমরা এক সাথে পান্তা ভাত খাওয়া, র্যালি করা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছি।”
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের সাথে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।