ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বহন করে দরবার স্তম্ভ
সাতক্ষীরা থেকে এস. এম নাহিদ হাসান
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী যে আন্দোলন হয় তার উত্তাপ ছড়িয়েছিলো সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলাতেও। সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দরবার স্তম্ভরূপে। প্রায় তিন দশমিক সাত মিটার উচ্চতার দরবার স্তম্ভটি তালা উপজেলা সদরের খেয়াঘাট মোড়ে অবস্থিত। DURBUR MEMORIAL| KING EMPEROR GEORGEV| EST- 12-12-11 লেখা দরবার স্তম্ভটি দেখতে ভিড় জমায় দেশি-বিদেশী পর্যটকসহ অনেকে। তালা উপজেলার এই দরবার স্তম্ভটি দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।
উপমহাদেশের মানুষ যখন ব্রিটিশ শাসনের প্রতিবাদ শুরু করে তখন ব্রিটিশ সরকার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা বাংলাকে ভেঙ্গে দেওয়ার পায়তারা করে। যা বঙ্গভঙ্গ নামে সকলের কাছে পরিচিত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আদেশ জারি হয়। কিন্তু আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯১১ সালে এ আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ব্রিটিশ সরকার। বাংলা বিভক্তিকরণের আদেশ রহিত হলে তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কপোতাক্ষ নদের তীরে এই দরবার স্তম্ভ তৈরি করা হয়। এটি তৈরি করেন তৎকালীন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক রাজ কুমার বসু। দরবার স্তম্ভটি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর স্থাপিত হয়।
রাজকুমার বসুর পারিবারিক আত্মীয় সত্তোর্ধ্ব নারায়ণ দাস মজুমদার বলেন, “ব্রিটিশ শাসকরা তীব্র আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। বাংলাকে ভাগ করা হবে না, এমন ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদানের জন্য ব্রিটিশ শাসকের প্রতিনিধি সম্রাট পঞ্চম জজ ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লীতে আসেন। সম্রাট পঞ্চম জজের দিল্লী আগমনকে স্বাগত জানিয়ে তালার তৎকালীন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক রাজকুমার বসু তালা বাজারের কেন্দ্রস্থল খেয়াঘাট মোড়ে ঐতিহাসিক এই স্তম্ভটি নির্মাণ করেছিলেন।”
পুরোপুরি ইটের তৈরি গোল স্তম্ভটির মাথার ওপর একটি বড় কলস ও তার ওপর আরেকটি ছোট কলসের চিহ্ন দেখা যায়।সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে স্তম্ভটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব¡ অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে।
যেভাবে যাবেন দরবার স্তম্ভে
সাতক্ষীরা সদর থেকে দরবার স্তম্ভের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা শহর থেকে বাস, মহেন্দ্র, অথবা মোটরসাইকেলে করে দরবার স্তম্ভে সহজেই যাওয়া যায়। সাতক্ষীরা শহর থেকে রওনা দিলে প্রথমে পাটকেলঘাটা ব্রিজ পড়বে। এই পাটকেলঘাটা বাজার থেকেও মোটরসাইকেল বা ইঞ্জিন চালিত ভ্যান করে তালা বাজারে যাওয়া যায়।
পাটকেলঘাটা বাজার পার হয়ে কিছু দূর গেলেই কুমিরা বাজার পড়বে। কুমিরা বাজার থেকে কিছুদূর গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকলে সামনে পড়বে ভাগবাহ বাজার। একই পথে দেখা যাবে ইসলামকাটি বাজার, সুজনশাহা বাজার, মাঝিয়াড়া বাজার। কিছু দূর যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ থেকে এগিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে কপোতাক্ষ নদের দিকে যেতেই খুলনা-পাইকগাছা মহাসড়কের পাশেই দেখা যাবে দরবার স্তম্ভ।