তাঁরা এখন নিজের ও অন্যের পোশাক বানাচ্ছেন

মানিকগঞ্জ থেকে ঋতু রবি দাস

বারসিক‘এ’ যোগদান এর ৩ বছর পেরিয়ে ৪র্থ বছরে পদার্পণ করলাম। তবে ২০০৮ থেকেই বারসিক‘র’ কার্যক্রম পশ্চিম দাশড়া রবিদাস পাড়ায় চলে আসছে। বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে বারসিক। তখন আমি স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে বারসিক‘র’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতাম। বারসিক‘এ’ যোগদানের পর বুঝতে পেরেছি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রথম ধাপে সমাজসেবা কর্তৃক ৫০ দিন ব্যাপি পিছিয়ে পড়া নারীদের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ৫০ জন এর ব্যাচ নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। সেই সময় রোজার মাস পড়ে যাওয়ায় ৪০দিন ট্রেইনিং হয়। বারসিক’র সহযোগিতায় এবং আমার সরকারি সম্পৃক্ততায় রবিদাস পাড়া থেকে মোট ১১জন প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। সেই সময় দৈনিক ৪০০ টাকা যাতায়াত ভাতা পান এবং সেলাই মেশিন, আয়রন মেশিন, কাচি, ডাটা শাকের বীজ, মগ পান প্রশিক্ষণার্থীরা। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে তারা সবাই সরকারি সনদ পান। শুরু হয় মার্চ মাসে এবং শেষ হয় মে মাসে।

একই বছরের নভেম্বরের দিকে আবার এই কর্মসূচির কথা জানতে পারি। এবার আমরা ৯ জনের তালিকা দিই এবং তাদের মধ্যে ২জন প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্ত হয়। এই কর্মসূচিটা ২৫দিনের জন্য করা হয়। ডিসেম্বরে শুরু হয় এবং জানুয়ারির এক তারিখ শেষ হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকেই মোট ১০ হাজার টাকা, বাটারফ্লাই সেলাই মেশিন, আয়রন মেশিন, কাচি এবং সরকারি সনদ পান।

এই প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর বৈশাখি রবি দাস, নিকিতা রবি দাস, টুম্পা রবি দাস, ঝুমা রবি দাস, প্রিয়া রবি দাস আরও কয়েকজন নিজের জামা বানানোর পাশাপাশি অন্যের পোশাকও বানাচ্ছেন। তাদের ভাষ্যমতে, বাজারে জামা কাপড় বানাতে গেলে অনেক মজুরি দিতে হয়, তখন আর মন চায় না কিছু বানাতে। এখন সেলাই মেশিন পেয়ে টুকটাক নিজের জামা নিজেই বানাতে পারছি। অন্তত কিছু টাকা তো বেঁচে যাচ্ছে।’ বৈশাখি রবি দাস নিজেরটা বানানোর পাশাপাশি পাড়ার বেশকিছু মানুষের ব্লাউজ, পেটিকোট, বাচ্চাদের ফ্রক বানিয়ে দিয়েছেন।

প্রিয়া রবি দাস অনেকগুলো নিজের জামা বানিয়েছেন। নিকিতা রবি দাসও মহল্লার কিছু মানুষের কাজ করেছেন। তিনি এখন বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজ, জামা বানাতে পারেন। এতে করে তার কিছু টাকা আয় হচ্ছে। টুম্পা দাস এখন তার মেয়ের জন্য নিজেই জামা বানিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আগে জামা বানানোর জন্য অন্যের কাছে দৌড়াতে হতো, এই সেলাই মেশিন পাওয়ার পর আমার খুবই উপকার হয়েছে। অফিস থেকে যে টাকা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে অনেক কাপড় কিনেছি এবং বাসায় বানানোর চেষ্টা করছি। মেয়ের জন্য কয়েকটি জামা-পায়জামা এবং শাশুড়ির জন্য ব্লাউজ বানিয়ে দিয়েছি।’ তিনি আরোও বলেন, ‘বিয়ের আগেও আমি একটু সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, মেশিন না থাকার জন্য কাজ করতে পারিনি, এখন এই মেশিন পেয়ে আমার কাজ সহজ হয়েছে।’

তাদের সবার প্রচেষ্টা থাকবে, তারা যেন এই দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। আপনার মাধ্যমে যখন কাউকে সহযোগিতা করতে পারবেন, সেটা যেমন প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তি অপরদিকে ব্যক্তিগতভাবে একটা ভালোলাগাও কাজ করে।

happy wheels 2

Comments