দেশটা তো আমাদেরই; তাই না! আসুন দেশের দায়িত্ব বুঝে নেই

নেত্রকোনা থেকে রোখসানা রুমি

দেশটা তো আমাদেরই। যে দেশে জন্ম গ্রহণ করেছি, আলো-বাতাসে বড় হয়েছি। খাদ্যপুষ্টি গ্রহণ করেছি, শিক্ষাগ্রহণ করেছি। যে দেশের সমাজ আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। দিয়েছে সাশ্রয়। সেই দেশের প্রতি আমার আছে কর্তব্য, আছে দায়িত্ব। আমাদের সকলের  এই দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো বুঝে নিতে হবে। তবেই দেশ সমৃদ্ধ হবে- হবে সোনার বাংলাদেশ।

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমূল ইউনিয়নের পাড়াদূর্গাপুর একটি প্রত্যন্ত কিন্তু, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর গ্রাম। সেই গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে যুক্ত। গ্রামের পাশে পাড়াদূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যার কারণে বেশিরভাগ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সাথে যুক্ত। তবে গ্রামের অধিকাংশ যুবক মোবাইলে, দোকানে-দোকানে সি ডি প্লেয়ার এর প্রতি কিশোর, যুবকরা বেশি আগ্রহী। স্কুল বা কলেজে না  গিয়ে টিভি, কম্পিউটার এবং মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের প্রোগাম দেখে। তাছাড়া যুব সমাজ ধীরে-ধীরে নেশার দিকে চলে যাচ্ছে। এই বিষয়টি এই গ্রামের কয়েকজন যুবকের কাছে খুব খারাপ লাগে এবং দারুণ ভাবিয়ে তোলে।

তারা তাদের যুব সমাজকে  মাদকমুক্ত করতে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নামে একটি যুব সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনটি দুই বছর যাবৎ অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদেরকে খাতা, কলম সহায়তা, যুবকদের সাথে মাদকের কুফল বিষয়ে আলোচনা, বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করে আসছে। তাছাড়া সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত থাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের সমস্যা, নিজের গ্রাম ও এলাকার বিভিন্ন অসংগতি, সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু করার তাড়না অনুভব করে। এর আগেও তারা নিজের গ্রামে বসবাসকারী মানুষের জন্য নিজ খরচে এবং ফলের গাছ, দরিদ্র ছাত্রকে পড়তে সহায়তা, স্কুলে চিত্রাংকন, বেগম রোকেয়া, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামালসহ মনীষীদের জীবনী প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে পাড়াদূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনার মতো কাজগুলো করে আসছে। কৃষকদের মধ্যে বীজ বিনিময়, পানির সমস্যা জন্য উপজেলায় যোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রম নিজ উদ্যোগেই করে আসছে।

এসমস্ত কার্যক্রম করার পাশাপাশি আরো একটি সমস্যা তাদের চোখে পড়ে। গ্রামের যে সকল রাস্তায় সাধারণ জনগণ চলাচল করে সেই রাস্তায় বর্ষাকালে রিকসা, ভ্যান, সাইকেল নিয়ে চলাচল করতে অসুবিধা হয়। ওই সকল রাস্তায় ছোট ছোট গর্ত এবং ভাঙা-চোরার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। তখন মানুষ জনের যানবাহনের পাশাপাশি হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়।
20170108_122739
এই সমস্যা চিহ্নিত করার পর সকল সদস্য মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই রাস্তাটি পাশের ক্ষেত থেকে মাটি কেটে ভরাট করবে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মেম্বার এর সাথে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তারা দুই বিলের পানি যাতায়াতের জন্য রাস্তায় একটি কালভার্ট স্থাপনের জন্য আবেদন করেন। মেম্বার তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। কালভার্ট এর জন্য ব্যবস্থা করার প্রতি প্রতিশ্রুতি দেন এবং ঐদিনে সাথে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
নির্দিষ্ট দিনে যুবকরা নিজ উদ্যেগে তাদের নিজেদের বাড়ির সামনের রাস্তার ভাঙা-চোরা অংশ এবং ছোট-খাট গর্তগুলো সবাই মিলে মাটি কেঁটে রাস্তা মেরামত করেন। কোথা থেকে মাটি কাটা হবে সেই জায়গাটি এলাকার বয়স্কদের সাথে আলাপ এবং পরামর্শ করে আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়। যুবকদের মধ্যে যারা একটু বয়সে বড় তারা প্রথমে মাটি কাটে এবং ছোটরা বহন করে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিয়ে আসে। এভাবেই তারা তাদের গ্রামের মধ্যের সম্পূর্ণ রাস্তা মেরামত করে।

গ্রামের সকল মানুষের কাছে এই উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হয়ে উঠে। পাশাপাশি সমর্থন এবং গ্রহনযোগ্যতা পায় ‘প্রকৃতি ও জীবন’ যুব সংগঠনটি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো বুঝানোর এর চেয়ে ভালো আর কোন উপায় হতে পারে না। উন্নয়নের জন্য কোন বড় বড় প্রকল্পের যেমন প্রয়োজন নেই তেমনি প্রয়োজন নেই কোন কর্তৃপক্ষের মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকা। নিজেদের ছোট-ছোট উদ্যোগগুলো সম্মিলিতভাবে পারে একটি বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পাশাপাশি অবকাঠামোর ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশটা তো আমাদেরই; তাই না। দেশটি এগিয়ে যাবে আমাদের সাথে সাথে। আমরা যদি আমাদের নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো বুঝে নিই এবং পালন করি; তাহলেই দেশটা পরিণত হবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। নেত্রকোনার এই তরুণ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাদের এলাকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছেন; মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি আশার আলো দেখাচ্ছেন তাদের!

happy wheels 2