শ্যামনগরে লবণাক্ততায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত বিপাকে কৃষক
সৈয়দা তৌহিদা ইসলাম নিশি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় দিন দিন লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় হতাশার মুখে পড়ছে এলাকার কৃষকেরা। আইলা পরবর্তী সময়ে এসমস্ত এলাকায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে সেই বেড়ে যাওয়া আর কমেনি। আস্তে আস্তে ফষল চাষ বাড়লেও আগের তুলনায় ফষল চাষের পরিমাণ অনেক কম। এই লবণাক্ততা একবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সেই গন্ডি পেরিয়ে শহর অঞ্চলে উঠতে শুরু করেছে। যার কারণে অতি হতাশায় পড়ছেন এলাকার কৃষক।
যে সমস্ত এলাকা কৃষি জোন হিসেবে পরিচিত সেই সমস্ত এলাকায় লবণাক্ততার কারণে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন এলাকায় নলকূপের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন। দ্রুত গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়াটা এক রকমের অভিশাপ হিসেবেই মনে করছেন কৃষকেরা।
উপজেলার বংশিপুর বিল, ধুমঘাট বিল, কয়ালপাড়ায় আগেকার দিনে ধান চাষের পরিমাণ অনেক বেশি এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদনও বেশি পরিমাণ হলেও বর্তমানে এই এলাকার চিত্র ভিন্ন। লবণাক্ততার কারণে অনেক সময় ধান চাষের পরপরই মরে যাচ্ছে ধান গাছ। ধান রোপণের পরবর্তীতে ডাল চাষ করেও ঠকেছে এলাকার একাধিক কৃষকরা। যে স্থানটিতে ডাল চাষে একদিন কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো, ঠিক সেই স্থানটি এখন লবণাক্ততার কারণে পতিত অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। একই খামারের একপাশে সবজি চাষ ভালো হলেও অন্যপাশে কেটে উঠছে লবণ। শুকিয়ে যাচ্ছে সকল প্রকার সবজি।
উপজেলার শংকাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার অধিকাংশ মানুষের পুষ্টির চাহিদা মিটে যায় শংকরকাটি গ্রামের চাষীদের কাছ থেকে ফসল সংগ্রহ করার মাধ্যমে। কিন্তু এই স্থানটিও লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে কৃষকের ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে বিপদে পড়েছেন এই এলাকার ফসলের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী। এমন চিত্র লক্ষ করা গেছে উপজেলার হাঠছালা, চন্ডিপুর সহ অধিকাংশ এলাকাতেও। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন চোখে পড়ার মত।
হাঠছালা গ্রামের প্রবীণ কৃষক রবীন্দ্র বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কখন যে কোন কাল তা বুঝে ওঠা কষ্টের ব্যাপার। আগেকার মত এখন আর আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে নেই বলে মনে হচ্ছে। যে সময় যে আবহাওয়া দরকার এখন তা আর পাচ্ছি না। বর্ষাকালে সময়মত বর্ষা হয় না, কখন শীতকাল কখন বর্ষাকাল আর কখন কি কাল তা বুঝে উঠতে পারি না। যার কারণে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
হাঠছালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসল যেন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা একদিকে লবণাক্ততা ও অন্যদিকে আবহাওয়াকে দায়ী করছেন। এলাকার প্রবীণ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনকার সময়ে আর গোলা ভরা ধান থাকে না। আগে বিঘা প্রতি ২৪/২৫ মণ ধান পেলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১৬/১৭ মণে। অনেক জায়গায় ১৮ থেকে ২০ মণ দেখা যায়। শুধু ধান নয় এলাকার বিভিন্ন কৃষি ব্যবস্থা দেখেও হতাশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকেরা। লবণাক্ততার কারণে বেড়ে যাচ্ছে মিষ্টি পানির জন্য হাহাকার। চৈত্র্যর শেষে মাইল এর উপর মাইল পাড়ি দিয়ে পানি আনছেন গৃহবধূরা। অথচ চারপাশে যে পানি নেই তা না। পানি আছে তবে খাওয়ার উপযোগী বিশুদ্ধ পানি না। পুকুরের পানিতে লবণাক্ততা কেটে ওঠায় পুকুরের পানি খাওয়ার অনুপযোগী উঠছে।