শিমুল তুলার মৌসুম
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চল
প্রকৃতিতে এখন তুলা ওড়ার মৌসুম। শিমুলের ডালে ডালে শিমুল মোচা বা খোলস ফোটেছে। মাতাল হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে ধবল শিমুল তুলা। এখন শিমুল তুলা ওড়ার দিন। শিমুল তুলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ তুলা দিয়ে আরামদায়ক বালিশ, শীতের লেপ, তোষক, নরোম গদিসহ শিশুদের নানা খেলনা পুতুল ও শোপিস তৈরি হয়। এ ছাড়া তুলা গাছের নরোম কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি, জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফলে শিমুল তুলা ও কাঠের একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও পিরোজপুর উপকূলে শিমুল গাছের কোন পরিকল্পিত বাণিজ্যিক আবাদ নেই। গ্রামের পথের পাশে অথবা গৃহস্থ বাড়ির আনাচে কানাচে শিমুল গাছ এখনও প্রকৃতিগতভাবে জন্মে। কেউ আবার শখেও দুই একটি শিমুল গাছ লাগান।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কুমিরমারা গ্রামের কৃষক মো. জামাল হোসেন জানান, এখন শিমুল তুলা সংগ্রহের মৌসুম। তুলার মোচা প্রচ- তাপদাহে ফেঁটে যাওয়ার উপযুক্ত সময়ই এখন। তবে প্রকৃতিতে এখন বাতাসের গতি বেশি। ফলে ফেটে যাওয়া তুলার ফল থেকে খুব সহজেই তুলা খসে বাতাসে ছড়িয়ে উড়ে যাচ্ছে। এর ফলে তুলার অপচয় ঘটায় তুলা সংগ্রহ জটিল হয়ে পড়ে। অথচ তুলা সংগ্রহ করতে পারলে তা লাভজনক হতে পারে।
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “শিমুল তুলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণ আকৃতির প্রতিটি শিমুল গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি তুলা উৎপাদন সম্ভব। আবার বড় গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি তুলা সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে তুলা ফেটে বাতাসে উড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ তুলার অপচয় ঘটে।
তিনি আরও জানান, আমাদের উপকূলীয় এলাকায় শিমুল তুলার বাণিজ্যিক কোন আবাদ নেই। তবে উপকূলের হাজার হাজা হেক্টর পতিত জমিতে তুলার আবাদ করা সম্ভব। এক বিঘা পরিমাণ পতিত জমিতে সারি করে ৩০টি শিমুল গাছ লাগানো যেতে পারে। বসন্তে শিমুল ফুল ফোটে। আর চৈত্র-বৈশাখের মাঝামাঝি শিমুল ফল পরিপক্ক হয়। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে দেড় থেকে দুই মণ তুলা সংগ্রহ করে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে একটি শিমুল গাছ বহু বছর বেঁচে থাকে। শিমুল গাছের তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন পড়ে না।