জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গ্রামীণ নারীর অবদান

 নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রানী সিংহ

জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্য “দুর্যোগ প্রস্তুতিতে লড়বো, স্মার্ট সোনার বাংলা গড়বো” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার দূর্গাশ্রম গ্রামের মৌমাছি কৃষানী সংগঠন নিজেদের তৈরি পরিবেশবান্ধব চুলা, হাজল প্রর্শন করেন এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গ্রামীণ নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা প্রদান করার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করেন।

ইতিহাসের সময়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় বেচেঁ থাকার জন্য গ্রামীণ নারীর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, চর্চা স্বাক্ষ্য বহন করে চলছে। অস্থিতিশীল অর্থনীতি, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে গ্রামীণ নারীরা তাদের নিজেদের চর্চা,অভিজ্ঞতাকে আরো গঠনমূলকভাবে অর্থ্যাৎ আধুনিক পদ্ধতির সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও চর্চার সমন্বয় করে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন।

ঐতিহাসিকভাবে এই কৃষির সূচনা হয়েছিল নারীর হাত ধরেই। এখনো টিকে আছে নারীর সাথে  সম্পৃক্ততায়, যা অনেক মহল স্বীকার করতে চান না। প্রতিনিয়ত কৃষি সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে আসছে আমাদের গ্রামীণ নারীরা। তাদের নিত্যদিনের কাজ, নিজস্ব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, লোকায়ত চর্চার মধ্য দিয়ে কৃষিকে করছেন সমৃদ্ধ। গ্রামীণ নারীর চর্চা যেমন কৃষিকে সমৃদ্ধ করছে তেমনি ব্যয় সাশ্রয়ী অর্থনীতেতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। পরিবারের প্রতিটি ব্যবহা্র্য উপকরণ নিজেদের স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে তৈরি করে স্থায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করেন।

স্থানীয় অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার, প্রাণী সম্পদ পালন ও সংরক্ষণ, হাজল, পরিবেশবান্ধব চর্চা, পরিবেশবান্ধব চুলা তৈরি ও ব্যবহার, বিনিময়, বীজ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে। তাঁরা আবহাওয়াকে চিন্তা করে বীজ রোপণ, বপন, সংরক্ষণ থেকে শুরু করে সময় জ্ঞান বিবেচনা করে সবজি বা ফসল উত্তোলন করেন। মোটকথা উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা, উত্তোলন ,সংরক্ষণ সকল কিছু টিকিয়ে রেখেছে আমাদের গ্রামীণ নারীরা।

তারই উদাহরণ হিসাবে দূর্গাশ্রম গ্রামের  নারী পরিবেশবান্ধব চর্চাকারী স্বপ্না বেগম চুলা ও হাজল তৈরিতে দক্ষতার সাথে বহু বছর যাবৎ নিজের অবসর সময়ে নানান ধরনের চুলা তৈরি করে আসছেন। জ্বালানির ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে চুলার নকঁশা, আকার, উচ্চতা, ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এখন পর্ন্ত প্রায় ৩৫টি পরিবেশবান্ধব চুলা ,হাজল তৈরি করে নিজের প্রতিবেশীদের দিয়েছেন। পরিবেশ রক্ষায় তাঁর এই চর্চাকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা  প্রদান করেন  মৌমাছি কৃষাণী সংগঠন।

অন্যদিকে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ পালনকারী ও সংরক্ষণকারী জোসনা বেগম। নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার দূর্গাশ্রম গ্রামের জোসনা বেগম। বিয়ের পর পর স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে যে উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তিনি ৩ সন্তানের জননী। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জাতের হাঁস,মুরগি পালন শুরু করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে হাসঁ,মুরগি,গরু,ছাগল,কবুতর পালন করে এলাকায় সম্মান কুড়িয়েছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার,অভিজ্ঞতাগুলোকে স্থায়িত্বশীল জীবিকা চলমানতাকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টাকে আরো গতিশীল রাখার জন্য স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন  মৌমাছি কৃষাণী সংগঠন।

অচাষকৃত উদ্ভিদ চর্চাকারী ও সংরক্ষণ কারী নারী জোহুরা বেগম (৪৯)। তিনি প্রকৃতিকে আশ্রয় করে বেচেঁ থাকার লড়াইয়ে ,পরিবেশ দূষণ রোধে  অবদান রেখে চলেছেন নিরবে। তিনি অচাষকৃত উদ্ভিদ কখনো খাদ্য হিসাবে কখনো বা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন সেই ছোট বেলা থেকে। নিজের পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কুড়িয়ে পাওয়া শাক রাখেন। এলাকায় অচাষকৃত উদ্ভিদ ব্যবহারকারী ও সংরক্ষণকারী হিসাবে একনামে সবার কাছে পরিচিত। প্রতিবেশীদেরকেও অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদ ও ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ করে দেন। প্রকৃতির এই বৈচিত্রময়তা টিকে রাখতে গ্রামীণ নারীর এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা  প্রদান করে মৌমাছি কৃষাণী সংগঠন।

happy wheels 2

Comments