জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে রাজশাহীতে যুবদের সাইকেলবন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত
রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম
‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টি, তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের আবাদি শাকসবজি ও ফসল, ক্ষতি হচ্ছে আমাদের কৃষক পিতা। আবার সময়মতো অনাবৃষ্টি, খরা তীব্র তাপদহ আমাদের জনজীবনকে দিনে দিনে পর্যদুস্ত করে ফেলছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো। কিন্তু ক্ষতির শিকার হচ্ছি আমরা বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষও। আমাদেও জন্য জলবায়ু তহবিল ছাড় এবং তা কার্যকরভাবে জনগোষ্ঠীর ক্ষতিপূরণে ব্যয় করতে হবে।’
রাজশাহীর তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের সব থেকে বড় যুব সংগঠন এবং ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের আয়োজনে রাজশাহীতে যুবদের উদ্যোগে আয়োজিত সাইকেলবন্ধন এবং সাইকেল র্যালিতে বক্তারা উপরোক্ত কথাটি বলেছেন। সাইকেল র্যালিতে যুবকরা ধনী দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি তুলে ধরেন। বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল বলেন, ‘বৈশি^ক জলবায়ু তহবিলের বাংলাদশের জন্য যা দেবার কথা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেনা ধনী দেশগুলো। অন্যদিকে দেশের ভিতরেও জলবায়ু তহবিলের সঠিক ব্যবহার না হবার কারণে জলবায়ু ভোক্তভোগী মানুষগুলো এর থেকে কোন সেবা পাচ্ছেনা।’ তিনি দাবি করেন- দেশের ভিতনে জলবায়ু তহবিলের টাকা নয় ছয় হয়, জলবায়ু তহবিলের টাকা ব্যবহারে স্বচ্ছ- জবাদিহিতা না থাকার কারণে সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছেনা। তিনি আরো দাবি করেন, জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় জেলা উপজেলাসহ ইাউনিয়ন কমিটিতে যুবদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক নয়, স্বেচ্ছাসেবী অরাজনৈতিক যুব সংগঠনগুলোকে এতে সুযোগ দিতে হবে।
জলবায়ু ন্যায্যতার এই দাবিতে সংহতি জানিয়ে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারিসক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে একদিকে প্রচন্ড খরা অন্যাদিকে হঠাৎ বা অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে শস্য ফসলের ক্ষতিসহ প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ তারা পায়না। এগুলো ভাবার সময় এসেছে।’
সিক্সিট্রিন ডে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন এর অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগরিতে অবস্থিত আলুপট্রিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যুব সংগঠনের প্রায় ৫০ জনের বেশি যুবক সাইকেলবন্ধন ও সাইকেল র্যালির আয়োজন করেন। তারা বলেন, ‘জলবায়ু দুর্য়োগের কারণে বর্তমান বিশে^ নানামূখী সংকট দেখা দিচ্ছে। বৈশি^ক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতের কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও নানামূখী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, কৃষক, মৎসজীবীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের নানা পেশার মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে।’
বক্তারা জানান, জলবায়ু পরির্বতনের কারণে বরেন্দ্রভূমির জনগোষ্ঠী নানামূখী ঝুঁকির সম্মুখীন। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিকভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছেনা। বরেন্দ্র অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনাবৃষ্টি, তীব্র দাপদহ, অধিক খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উপর প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার প্রাকৃতিক জলাধার তথা- খাল, খাড়ি এবং পুকুড়গুলো লিজ দেওয়ায় প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একদিকে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ রাসায়নিক কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আবার জলবায়ু পরিবর্তনে পানি সংকটের জন্য নানামূখী বাধার কারণে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ এর সাবির্ক নেতিবাচক প্রভাব চুড়ান্তভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।