সাঁথিয়ায় গাভী পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরালেন বেকার যুবক বেলায়েত

সাঁথিয়ায় গাভী পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরালেন বেকার যুবক বেলায়েত

জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

শ্রম,মেধা আর সাহসিকতা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করা যায়। পৃথিবীতে যারাই সফলতার স্বর্ণ শিখরে উঠেছে তাদের সবাইকে করতে হয়েছে সীমাহীন পরিশ্রম, সাথে দিতে হয়েছে পাহাড় সম সাহসিকতার পরিচয়। তবেই পৌঁছাতে পেরেছে নির্ধারিত স্বপ্নের লক্ষ্যে। এমনই এক স্বপ্ন পূরণ লক্ষ্যের দাবিদার পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভাধীন বোয়াইলমারী গ্রামের মৃত রওশন আলীর ছেলে উদ্যমী বেকার যুবক বেলায়েত হোসেন। তিনি গাভী পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী।

Santhia Cow Image

বেলায়েত হোসেন “বারসিক নিউজকে” জানান, ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করে পারিবারিক সমস্যার কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি। শিক্ষাগতযোগ্যতা কম থাকায় চাকুরির অভাবে দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। বেলায়েত বেকারত্বের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে ১৯৯৮ সালে একটি গাভী ও একটি বকনা বাছুর কিনে মাত্র ১৪ হাজার টাকা পূঁজি নিয়ে নিজের বাড়িতে গাভি পালন শুরু করেন। তিনি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতি সদস্য হন এবং সমিতিতে হিসাবের স্বচ্ছতা না থাকার কারনে তাকে তদন্ত কমিটির অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তার তদন্তের রিপোর্ট ভালো হওয়ার কারণে তাকে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন বেলায়েতের গাভির দুধের পরিমাণ মাত্র ৩ লিটার।

কিন্তু বেলায়েতের মনে অনুপ্রেরণা হয়। তিনি সমিতির সভাপতি তাই তাকে গরু এবং দুধের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই থেকে বেলায়েত গাভি পালনের জোর দেন। বর্তমানে তার ফিজিয়াম, শাহিয়াল ও জার্সি জাতের ৯টি গাভি ২টি ষাড় ৪টি বকনা ও ৯টি বাছুরসহ মোট ২৪টি গরু আছে। যার বর্তমান মূল্য হবে প্রায় ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে তার গাভি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৯০ লিটার দুধ হয় এবং প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। বেলায়েত জানান, পরিবারের সবাই খেয়ে পড়ে সংসার চালিয়ে খরচ বাদে প্রতিবছর তার আয় হয় ২ লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া গরুর গোবর থেকে তৈরি জৈব সার, রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে দিয়ে ভালো ফসলও উৎপাদন করছেন। গোবর থেকে বায়ো গ্যাস তৈরি করে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং বিদ্যুতের অভাবও পুষিয়ে নিচ্ছেন এ থেকে। এরপর থেকে বেলায়েতকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে স্বর্ণ পদক পান এবং ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার পান।

belaet pic 1

এছাড়া পাবনার সাঁথিয়ার এই আদর্শ কৃষক বেলায়েত হোসেন দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৪ নভেম্বর/১৭, ৪৬তম জাতীয় সমবায় দিবসে তিনি ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খোন্দকার মোশারফ হোসেন এমপির কাছ থেকে জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০১৫ গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে কেয়ারটেকার সরকারের সময় প্রথমবার তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে পুরস্কার পান। প্রায় এক যুগ আগে সাঁথিয়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গাভী পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গাভী পালন শুরু করেন। দুগ্ধ সমবায়ী হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিবিড় তত্বাবধানে বোয়াইলমারী প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি পাবনা জেলার মডেল সমিতি হিসেবে গড়ে উঠেছে। জেলার সমবায়ীদের আধুনিক পদ্ধতিতে গাভী পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি দুগ্ধ শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছেন।

বেলায়েত বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা, আমাকে সরকারি বেসরকারী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং গো খাদ্যের মূল্য কমানো হলে গাভী পালন করে আরও আয় করা সম্ভব। ইতিমধ্যে আমি অনেক বেকার যুবককে গাভী পালনে উদ্বুদ্ধ করেছি।’ তার সফলতায় অনেক যুবকই গরুর খামার করেছেন। তিনি বেকার যুবকদের অভিশপ্ত জীবন থেকে রক্ষা পেতে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য চাকুরীর পেছনে না ঘুরে উদ্যমী ও গঠন মুলক কাজ করার আহবান জানান।

happy wheels 2

Comments