এই সুযোগগুলো আমরা পাই না
রাজশাহী থেকে ব্রজেন্দ্রনাথ ও অমৃত সরকার
“পাড়ায় ছাগল গরুকে ইনজেকশন দিচ্ছে, আচ্ছা ডাক্তার ভাই আমার গরুকে ইনজেকশন দিতে কয় টাকা লাগবে”? হাতে দুইটি গরুর দড়ি ধরে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার ভূগরোইল আদিবাসী পাড়ার প্রবীণ দিনমজুর প্রফুল্ল বিশ্বাস (৫৯)। তাঁর কথা শুনে পবা উপজেলার প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ডাক্তার মো. হাসান আলী বলেন, “আজকে কোন টাকা লাগবে না।” ডাক্তারের কথাটি শুনে প্রফুল্ল বিশ্বাস তৃপ্তির হাসি হেসে বলেন, “এই সুযোগ গুলো আমরা পাই না বাবা। আমাদের পাড়ায় প্রতিবছর বিভিন্ন রোগে আনেক গরু, ছাগল মারা যায়।”
গত ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলার পবা উপজেরার ভূগরোইল গ্রামে বারসিক ও পবা উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে গবাদি পশুর টিকা ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। সেখানে গরু, ছাগল, ভেড়ার কৃমি, গলাফুলা ও খুড়া রোগের টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। সে সময় গ্রামের ৪০টি আদিবাসী পরিবার ও ১৫টি বাঙালি পরিবার নিজেদের গবাদি পশুকে টিকা প্রদান করিয়ে নেন।
নিজের ৪টি ছাগল ও ২টি গরুকে টিকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সপ্না সরেন (৩৮) বলেন, “এত সহজে আমার গরু ও ছাগলের তিন রোগের টিকা দিয়ে নিতে পারলাম আবার কোন খরচ হলো না। আবার এ রোগগুলো থেকে আমার গরু, ছাগলগুলোও রক্ষা পাবে।” সাতটি ছাগলকে টিকা প্রদান করিয়ে নিয়ে আদরী বিশ্বাস (৩৫) বলেন, “আমাদের গরু, ছাগল যখন অসুস্থ হয় আমরা মাঝে মাঝে স্থানীয় বাজারের গিয়ে কিছু ঔষধ এনে চিকিৎসা করাতাম। কিন্তু রোগ হওয়ার আগে আমরা কখনই এভাবে গরুকে টিকা দিতে পারিনি। আবার এ সেবা কিভাবে পাওয়া যায় তাও জানতাম না।”
টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বে প্রাণী সম্পদের মালিকদের নিয়ে টিকা বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয নিয়েও আলোচনা করা হয়। সেখানে কত দিন পর পর ছাগল, গরুকে কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে, কখন ও কি ধরনের সমস্যা হলে টিকা প্রদান করতে হয় তা জানানো হয়। আলোচনায় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ডাক্তার মো. হাসান আলী বলেন, “বর্তমানে চাহিদার তুলনায় টিকাগুলো খুবই কম আসে, আমরা আমাদের প্রয়োজন মাফিক চাহিদা পাঠিয়েছি। সাপলাই আসলে সবাইকে চাহিদা মাফিক টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে।”
আলোচনা শেষে ভূগরোইল গ্রামের আদিবাসী ও বাঙালি পরিবার মিলিয়ে ১৪০টি ছাগল, ১০টি ভেড়া এবং ৮০টি গরুকে কৃমি, গলাফুলা, খুড়া রোগের প্রতিষেধক প্রদান করা হয়।