প্রাণীসম্পদ: অর্থনৈতিক নিরাপত্তার উৎস
রাজশাহী থেকে ইসমত জেরিন
“আপা গরু বেঁচেই তো আমার এই ঘরবাড়ির জায়গা কেনা, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করানো সব করেছি, একটা করে গরু বেঁচেছি আর টাকা জমিয়ে রেখেছি। এইভাবেই আস্তে আস্তে এই বাড়িটি করতে পেরেছি। গরু আমার কাছে স্বর্ণের চেয়ে কিছু কম নয়।” প্রাণী সম্পদ সম্পর্কে এই কথাটি বলছিলেন মোছা কামরুন্নাহার বেগম। গ্রামীণ নারীর জীবনে এই প্রাণী শুধু সম্পদ নয় অনেক ভালোবাসার বিষয়। যেমন করে তারা তাদের সন্তানদের ভালোবাসেন তেমনি করে তারা তাদের এই প্রাণীগুলোকেও ভালোবাসেন। গ্রামীণ জীবনে প্রাণী কখনও বিপদের বন্ধু, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার উৎস, সামাজিক মর্যাদা রক্ষাকারী, প্রতিদিনের অর্থ উপার্জনের উৎস, আবার কখনও কখনও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের উৎস, জ্বালানির উৎস, কৃষি ক্ষেত্রে জৈব সার তৈরির উৎস হিসেবে কাজ করে।
এই প্রাণী সম্পদগুলোকে আরো কিভাবে যতœ করলে বাণিজ্যিকভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রাজশাহীর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বড়শীপাড়া গ্রামের শান্তিপুর নারী সংগঠন ও আলোর পথে যুব সংগঠনের সদস্যরা বারসিক’র সহায়তা নিয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে। সেই যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বড়শীপাড়া গ্রামের মোট ৩০ নারী ও পুরুষ এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। যুব উন্নয়নের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষক মো. ইউসুফ আলীর সঞ্চালনায় ৭দিনের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল (৭জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে এই ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে গোদাগাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থেকে সনদ বিতরণ করা হয়। উক্ত সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. সালেক উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোগ্রাম ইউপির নারী ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. শাকিলা পারভীন, ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শ্রী সুধীর ওরাঁও, বড়শীপাড়া গ্রামের মো. সেলিম রেজা, মো. শাহজাহান আলীসহ গ্রামের কৃষক, নারী ও যুবকরা।
সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. সালেক উদ্দিন বলেন, “এই প্রশিক্ষণই শেষ নয় আপনাদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরির জন্য উপজেলা যুব উন্নয়ন সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। আপনারা যেকোন প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন আমরা আমাদের সাধ্যমত আপনাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।” এছাড়াও তিনি উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও সেবা যেমন- পারিবারিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ঋণ সুবিধা, গবাদি প্রাণী বিষয়ক ঋণ, আত্ম কর্ম সংস্থান তৈরির জন্য নারীদের সেলাই, ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ, যুবকদের জন্য মাছ চাষের প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সকলের সামনে তথ্য সহভাগিতা করেন।
ইউপি পুরুষ সদস্য শ্রী সুধীর ওরাঁও বলেন, “সরকার জনগণের জন্য সেবা গ্রহণের ব্যবস্থা করে রেখেছে এখন জনগণকে সেই সেবা পাওয়ার জন্য সরকারি অফিসগুলোতে যোগাযোগ করতে হবে এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের বুঝে নিতে হবে। তাহলেই আমাদের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং নিজেদের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।”
সনদ বিতরণ শেষে মুক্ত আলোচনায় মো. মোজাম্মেল হকের প্রশ্নের জবাবে এই সব সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী ও যুবকদের কি কি ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে সেই বিষয়েও আলোচনা করা হয়।