হাঁস পালনে আনজুয়ারা বেগমের সফলতা
সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ ঘোষ
আমাদের এই পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের কাজের মূল্যান কতটুকু করি? কিন্তু এই পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের কাজের অবদান অনেকটাই। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। যেমন কৃষি ক্ষেত্র অফিস আদালত এমনকি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও নারী। ঠিক তেমনি আমার দেখা এক জন সংগ্রামী নারী আনজুয়ারা বেগম।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলবর্তী দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মেয়ে আনজুয়ারা বেগম (৪৮)। আনজুয়ারা বেগম ছয় ভাই বোনের মধ্যে সেঝো মেয়ে। তাঁর বিয়ে হয়েছিলো মাত্র ১২ বছর বয়সে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। আনজুয়ারা বেগমের স্বামী সোহরাব আলী আইলার সময় মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজে সংসারের হাল ধরেন। তাঁর একটি ছেলে নাইম (২০) রয়েছে। নাইম এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটর্জ পাটনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টির সহযোগিতায় জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত সংগঠন বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে চকবারা গ্রামের খোলপেটুয়া সিএসও দলে যুক্ত হন আনজুয়ারা বেগম। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ছাগল নিলে পরিবারের আয় বাড়বে। তাই বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সহায়তা হিসাবে তিনি দুইটি ছাগল, দুইটি গাছের চারা, সাত প্রকারের বীজ ও পাঁচটি হাঁস পান। বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কাজে দিনমজুর দেয় আনজুয়ারা বেগম। এই আয় থেকে পারিবারিক খরচ মিটিয়ে ছেলের পড়ার পিছনে খরচ করেন। তাঁর ছেলে নাইম হোসেন মায়ের পাশাপাশি ইলেকটিক্সের কাজ করে নিজের খরচ কিছুটা মেটায় এমনটাই জানালেন আনজুয়ারা বেগম।
আনজুয়ারা বেগমের কাছে হাঁস পালনে সফলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বারসিক থেকে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং নিয়মিত মিটিং অংশগ্রহণ করে হাঁস পালনে সফল হতে পেরেছি।’ তিনি জানান, হাঁস পালনে খরচ কম। অল্প দিনে বেশি টাকা পাওয়া যায় এবং হাঁসের মাংসের দাম ও ডিমের দাম বেশি হওয়াতে লাভ বেশি। তিনি হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের পরিবারে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেন এবং ছেলের কিছুটা পড়ার খরচ চালাতে পারেন। এর পাশাপাশি স্বল্প সঞ্চয় জমা করেন। আনজুয়ারা বেগমের স্বপ্ন এখন একটি হাঁসের খামার করা। তিনি বারসিককে ধন্যবাদ জানান তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।