উদ্যোগী নাসরিন আক্তার

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

পরিবারের সামগ্রিক আয়বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীরা যে নিরন্তর অবদান রাখেন তার আরো একটি উদাহরণ হল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের নাসরিন আক্তার (৪২)।

স্বামী ও দুই সন্তানসহ চার সদস্যের ছোট্ট সংসার তার। স্বামী জাকীর হোসেন (৪৬) পেশায় মটর সাইকেল চালক ছেলে একমাত্র ছেলে জাহিদ হাসান (১৮) একাদশ শ্রেণী ও একমাত্র মেয়ে উর্মি সুলতানা ৯ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে পরিশ্রম ও আয় রোজগার করে সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে শাপলা সিএসও দলে যুক্ত হন। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে কিছু ছিট কাপড়, একটি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও দু’টি মুরগি সহযোগিতা পান। এরপর বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি নিজের ছাগলগুলো পরিচর্যাসহ ছিট কাপড়ের ব্যবসাটি ভালোভাবে চলমান রাখেন।


নাসরিন আক্তার একজন উদ্যোগী যোদ্ধা হিসেবে খুব সহজেই তাঁর সফলতার দিকে ধাবিত হন। তিনি পরিবারের কাজের পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যবসা পরিচলনা করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নজর কেড়েছেন স্থানীয়দের। তার বাড়িতে আগে থেকে একটি সেলাই মেশিন থাকায় লোকজন পোশাক তৈরি করার জন্য আসেন এবং একই সাথে তার এখানে প্রয়োজনীয় কাপড়ের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গ্রামের নারীরা অনেকেই এই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার বা ক্রয়ে স্বাচ্ছন্দ বোধ না করায় নিজের বাড়িতে এই উপকরণটি বিক্রি করতে পারায় বিক্রির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে বলে জানান নাসরিন আক্তার। তার বাড়িতে এলাকার নারীরা নানা ধরণের কাজে এসে একইসাথে নানা রকমের সুযোগ বা প্রয়োজন মিটাতে পারছেন। বিশেষ করে স্যানিটারি ন্যাপকিন অনেকাংশে পুরুষদের সাথে গ্রামের নারীরা আলোচনা করতে সংকোচ বোধ করেন। একারণে গ্রামের নারীর কাছ থেকে সহজেই সাবলীলভাবে এটা ক্রয় করতে পারেন। তিনি প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রয় শেষে জমাকৃত সঞ্চয় টাকা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে নওয়াবেকী বাজার থেকে মালামাল ক্রয় করেন। এভাবেই তার ব্যবসার চাকা সফলভাবে ঘুরতে থাকে। তার উদ্যোগ দেখে দলের অন্যান্য সদস্যরা আগ্রহী হওয়ার প্রচেষ্টা করছেন।


এ বিষয়ে নাসরিন-জাকীর দম্পতি বলেন, “বারসিক থেকে আমাকে কিছু ছিটকাপড় সহযোগিতা দেয়, তা থেকে লাভ করে আমার এখন ৪টি ছাগল হয়েছে। নিজের সেলাই মেশিন এর কাজ, ছিটকাপড় এর কাজ, ২০ টাকার মালামাল ও স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করে এখন আমরা বেশ ভালো আয় করতে পারছি।” নানামূখী ব্যবসা পরিচালনা করে আয় করে সন্তানদের লেখাপড়া সাংসারিক কাজে ব্যয়ের সমাজে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে চায়।
উপকূলীয় নারী যোদ্ধা নাসরিন আক্তারের উদ্যোগ একদিকে যেমন তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন অপরদিকে তেমনি সমাজ ও দেশ সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা পালন করছেন।

happy wheels 2

Comments