উপকূলে ১৬০ ধরনের স্থানীয় চর্চা প্রদর্শিত
উপকূল থেকে বাবলু জোয়ারদার
১৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ শনিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট (হাসার চক) গ্রামে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় লোকায়ত জ্ঞানের প্রয়োগ, প্রদর্শনীর মাধ্যমে অভিযোজন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
হাসার চক পদ্ম কৃষক উন্নয়ন সংগঠন, দিঘির পাড় কৃষক উন্নয়ন সংগঠন, হাসার চক কৃষক উন্নয়ন সংগঠন, স্থানীয় জনগোষ্ঠি, সবুজ সংহতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে এই অভিযোজন মেলায় কুষক, শিক্ষার্থী, নারী, পুরুষ, যুব, সাংবাদিক, স্থানীয় জনগোষ্ঠি, বারসিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে নানা সংকট মোকাবেলা করে এখনো উপকূলের অনেক কৃষকরা যুদ্ধ করে টিকিয়ে রেখেছেন বহু দেশি জাতের শস্যফসল ও চর্চা।
দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় লোকায়ত জ্ঞানের প্রয়োগ, প্রদর্শনীর মাধ্যমে অভিযোজন মেলায় ধুমঘাট হাসার চক গ্রামের ৩টি সংগঠন, শীলতলা গ্রামের ১টি সংগঠন ও তেরকাটির চকের ১টি সংগঠনের মোট ১০ জন কৃষাণী ১০টি স্টলের মাধ্যমে প্রায় ১৬০ ধরনের স্থানীয় চর্চা প্রদর্শন করেন (ভার্মি কম্পোস্ট,গর্ত কম্পোস্ট, জৈব বালাইনাশক (মেহগনি, নিম, গাঁদা ফুল,তামাক ও হুইল পাউডার), স্থানীয় মাছ সংরক্ষণ, ক্যারেট পদ্ধতিতে ফসল চাষ, বস্তা পদ্ধতিতে ফসল চাষ, বালতি পদ্ধতিতে ফসল চাষ, নষ্ট মাটির ফিল্টারে সবজি চাষ, প্লস্টিকের পুন:ব্যবহারের মাধ্যমে বোতলে সবজি চাষ, ফেরেমোন ফাঁদের ব্যবহার, মাচা পদ্ধতিতে ফসল চাষ, অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ, মশাল, পরিবেশবান্ধব চুলা, বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি, দুর্যোগকালীন শুকনা খাবার সংরক্ষণ, হাজল পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো, হাজল, লবণ তৈরি, মালসা পদ্ধতিতে সবজি চাষ, মাছ ধরার স্থানীয় পদ্ধতি লাভা, হামান দিস্তা, মেটে, খড়ের ঘর, মাছ ধরার আটল, ঝুড়ি পদ্ধতি শামুক, ঘুটের ছাই, মতিয়ার তামাক, গুল, গোচনা ডোল পদ্ধতি, ভিটা উচুকরণ, ঢেকি, কাকতাড়ুয়া, ভার্মি কম্পোস্ট মাটির মধ্যে বীজ সংরক্ষণসহ অন্যান্য পদ্ধতি)। কৃষাণীদের প্রদর্শিত অভিযোজন চর্চার সংখ্যা, মান ও উপস্থাপনের উপর ভিত্তি করে কৃষাণীদের পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। মেলায় প্রবীণ কৃষাণীরা নতুন প্রজন্মের কাছে আগের দিনের কৃষি চর্চার তথ্য তুলে ধরেন। অভিযোজন মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন নমিতা মন্ডল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন কনিকা মন্ডল, তৃতীয় স্থান অর্জন করেন নীলিমা মন্ডল
অভিযোজন মেলার গুরুত্ব তুলে ধরে সমাজ সেবক ও কৃষক সুকন্ঠ আউলিয়ার পরিচালনায় অভিযোজন মেলার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রদর্শনী মেলা শেষে বক্তব্য রাখেন সমাজ সেবক মিজানুর রহমান, হাসার চক পদ্ম কৃষক উন্নয়ন সংগঠনের সন্ধ্যা রানী মন্ডল, সমাজ সেবক ও কৃষক সুকন্ঠ আউলিয়া, পশ্চিম জেলেখালী কৃষক সংগঠনের সভাপতি ভূধর চন্দ্র মন্ডল, শিক্ষক মৃত্যন্জয় মন্ডল, জবা কৃষি নারী সংগঠনের সভাপতি লতা মন্ডল, যুব নারী উমা রানী মিস্ত্রি, হাসার চক কৃষক উন্নয়ন সংগঠনের হৃতিশ কুমার মন্ডল, বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, বরষা গাইন ও বাবলু জোয়ারদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দিন আমাদের এলাকায় লবণাক্ততা বাড়ছে ঘুর্ণিঝড় হচ্ছে, সাথে আছে নদী ভাঙনের মত দুর্যোগ। এসব পরিবর্তিত অবস্থার সাথে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল/চর্চা প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন। এই চর্চা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চর্চা হয়ে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় লোকায়ত জ্ঞানের ব্যবহার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।’ তারা আরও বলেন, ‘দিন দিন এই জ্ঞানের সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমাদের কৃষি জমি আগের থেকে বাড়েনি বরং কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের নানা ধরনের পোকার আক্রমণ বেড়েছে। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ও বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করি কিন্তু আমার জ্ঞান ব্যবহার করেও এগুলো দমন করা যেত। লোকায়ত জ্ঞানের মাধ্যমে কৃষি চর্চা সংরক্ষণ, ব্যবহার ও সম্প্রসারণে সকলের সচেতনতা বাড়াতে হবে। কৃষকদের নিজস্ব চর্চা ব্যবহার দেখে আমাদের উপকূলীয় এলাকার অনেক কৃষক এই চর্চা ব্যবহার করে নিজের জ্ঞানকে বাড়াতে পারবে।’